এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক আইনুল ও শাকিলের পরিবারের আকুতি

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে থাকা ২৩ জন নাবিককের মধ্যে দুই জনের গ্রামের বাড়ি মিরসরাইয়ে। তারা হলেন নাবিক মোশাররফ হোসেন শাকিল ও ওয়েলম্যান আইনুল হক অভি। মোশাররফ হোসেন শাকিল উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের কয়লা পশ্চিম সোনাই গ্রামের শামছুল হক ও আনোয়ারা বেগমের তিন পুত্রের মধ্যে ৩য়। অপরজন আইনুল হক অভি ৬ নং ইছাখালী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের দক্ষিন ভূঁইয়া গ্রামের দলিল কোম্পানী বাড়ীর সুজাউল হক ভোলা মিয়ার পুত্র। মোশারফ হোসেন শাকিল নাবিক ও আইনুল হক অভি ওয়েলম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

৪ মাস পরেই দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল মোশাররফ হোসেন শাকিলের (২৪)। জলদসু্যুদের হাতে আটকের পর তাকে ঘিরে পরিবারের সদস্যদের আশা এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ৪ মাস আগে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে যোগ দেন তিনি। এ চাকুরি তার পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছিল। পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী এই সদস্যের জিম্মি দশায় আতঙ্কিত পুরো পরিবার।

সোমালিয়ার জলদস্যুরা যখন এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণে নেয়, তখনই বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের মোবাইল নম্বরে কল করেন মোশাররফ হোসেন শাকিল। মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) দুপুর দুইটা থেকে সর্বশেষ রাত ৮ টা পর্যন্ত প্রায় ২০ মিনিটের মতো তার কথা হয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। সর্বশেষ তিনি বলেন, ‘আমার ফোন কিছুক্ষণের মধ্যে সোমালিয়ান জলদস্যুরা নিয়ে নেবে। আমার জন্য দোয়া করবেন।’

শাকিলের বড় ভাই আবু বকর বলেন, ‘মঙ্গলবার কথা বলার সময় ভীষণ আতঙ্কিত ছিল শাকিল। ভয়ার্ত কণ্ঠে আমাদের জানায়, সোমালিয়ান জলদস্যুরা তাদের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। সবাইকে একটি কক্ষে আটকে রেখেছে। সর্বশেষ রাত আটটার সময় কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে শাকিল। জীবিত ফিরে আসতে সবার কাছে দোয়া চায় সে। আমার বাবা, মা, পরিবারের সদস্যরা কেউই সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। আমরা সবাই তার জীবিত ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি।’

আবু কবর বলেন, ‘বাবা, মা, তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে উপার্জনক্ষম হচ্ছে শাকিল। আমার একটি ব্যবসা থাকলেও সেটি এখন নেই। আমার আরেক ভাই রবিউল হোসেন বিদেশী জাহাজে চাকুরি করলেও এখন দেশে। তার এমন পরিণতিতে পরিবারের অর্থিক অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে যাবে। আমার ভাই ৪ মাস পর দেশে ফেরার কথা ছিলো। দেশে ফিরলে তাকে বিয়ে করানোর পরিকল্পনা ছিল আমাদের।’

করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমার ইউনিয়নের মোশারফ হোসেন শাকিল নামে একজন সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে আটক জাহাজে রয়েছে। তাকে ফিরে পেতে পরিবারের লোকজন আকুতি করছে। আমরা যতটুকু দেখছি সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি আটক হওয়া সবাই সুস্থ্যভাবে দেশে ফিরে আসবে।

অপরদিকে আইনুল হক অভির বড় ভাই মুন্না বলেন, আমাদের সঙ্গে মঙ্গলবার রাত ৮ টায় অভির সাথে শেষ কথা হয়েছে। তখন সে বলেছে, ‘আমাদেরকে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ওইখানে যেতে দুই থেকে তিন দিন লাগবে। আমাদের মোবাইলসহ সবকিছু নিয়ে ফেলবে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

এদিকে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া শাকিল ও আইনুলের বাড়ীতে চলছে আহাজারী। পরিবারের সদস্যদের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সবার দাবি, বাংলাদেশ সরকার যেভাবেই হোক তাদের যেন জীবিত ফিরিয়ে আনে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে জলদস্যুরা বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সোমালিয়া উপক‚লের দিকে নিয়ে যায়। পণ্যবাহী জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কবির গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১ টার দিকে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন