কক্সবাজারে জেলা সম্পাদকের ইন্ধনে উপজেলা ছাত্রলীগ সম্পাদকের ওপর হামলা

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। কমিটি বাণিজ্য করতে না পারায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানের ইন্ধনে শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হকের নেতৃত্বে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আকিথ হোসাইনের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠেছে।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলাপ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বুধবার (৫ অক্টোবর) রাত পৌনে ১১টার সময় শহরের পুরাতন পান বাজার এলাকায় (ফিরোজ শপিং কমপ্লেক্স) মারুফ আদনানের বাড়ির সামনেই এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার মো. আকিথ হোসাইনের দাবি, কেন্দ্র থেকে কমিটি পাস করায় এবং জেলা ছাত্রলীগের পরামর্শ ছাড়া ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করায় পরিকল্পিতভাবে ডেকে এনে হামলা করা হয়। তবে, এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত দুই সাধারণ সম্পাদক।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন জানান, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারূফ আদনানের বাসা থেকে বের হয়ে মার্কেটের নিচে আসে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরহান মাহমুদ রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক মো. আকিথ হোসাইন। তখনই ১০/১২ জনের একটি দল তাদের দুজনকে ঘিরে ধরে। এসময় তারা আকিথকে মারধর করে পালিয়ে যায়। তবে তাদের চেনা সম্ভব হয়নি বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

আহত চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আকিথ হোসাইন বলেন, ৩১ জুলাই রুবেলকে সভাপতি ও আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৯ সেপ্টেম্বর আমাদের উপজেলা আওতাধীন ৪টি নিস্ক্রিয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করি। কিন্তু সেদিনই আমাদের বিলুপ্ত করা কাকারা, খুটাখালি, চিরিংগা এবং বরইতলি ইউনিয়ন শাখার কমিটিগুলো পুনর্বহাল করে জেলা ছাত্রলীগ। বিষয়টি নিয়ে আমরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বললে তারা আমাদের দেখা করতে বলেন। এতদিন সাধারণ সম্পাদক ঢাকায় থাকার কারণে আমরা দেখা করতে পারিনি। বুধবার প্রথমে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ারনালায় গিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সাথে দেখা করি। এরপর সভাপতির পরামর্শে সাধারণ সম্পাদকের সাথে দেখা করি। সেখান থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সাধারণ সম্পাদকের বাসার নিচেই আমার ওপর হামলা হয়।

তিনি আরও বলেন, মূলত কমিটি বাণিজ্য করতে না পারায় এবং তার (মারুফ আদনানের) অনুমতি ছাড়া ইউপি কমিটি বিলুপ্ত করায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানের হুকুমেই শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলা হয়েছে। এর আগেও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। বিষয়গুলো আমি কেন্দ্রকে অবহিত করেছি।

আহত এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার আমি কক্সবাজার সদর থানায় এজাহার দায়ের করব।

আহতের সাথে থাকা চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরহান মাহমুদ রুবেল বলেন, কেন্দ্র থেকে কমিটি দেওয়ায় প্রথম থেকে আমাদের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান। ঢাকায়ও তিনি আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলেন। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর আমাদের বিলুপ্ত করা কমিটি ক্ষোভের বশে সেদিনই পুনর্বহাল করেন তারা। এ বিষয়ে কথা বলতে এবং একটি বর্ধিত সভার আয়োজন করতেই আমরা সাধারণ সম্পাদক মারুফের বাসায় যাই। আমরা যখন সেখানে যাই তখন সেখানে শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরসহ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আমরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মনিরকে ইশারা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান। তখন সে বের হয়ে যায়। এরপর আমরা সেখানে ঘণ্টাখানেক সময় অবস্থান করে বের হওয়ার সাথে সাথে আমাদেরকে ‍ঘিরে ধরা হয়। পরে আকিথের ওপর হামলা করে হামলাকারীরা কয়েকজন মার্কেটের ভেতর ঢুকে যায়। কয়েকজন দ্বিতীয়তলায় উঠে যায়। সে সময় হামলার বিষয়টি আমি মুঠোফোনে মারুফ আদনানকে জানানোর সাথে সাথেই মনিরসহ হামলাকারীদের কয়েকজন আমাদেরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, মার্কেটের চারপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই প্রমাণ মিলবে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির।

এই ছাত্রলীগ সভাপতি আরও বলেন, হামলার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জেলা আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবহিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক বলেন, ছাত্রলীগ মানে আমার ভাই। আমি কেন আমার ভাইয়ের ওপর হামলা করব। আমি তো আমার ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে গেছি।

তিনি আরও বলেন, যেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে সেখানে টোকাই, ছিনতাইকারীদের উপদ্রব বেশি। হয়ত মোবাইল ছিনতাই করতেই টোকাইরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান বলেন, হামলার খবর শুনে আমি মনিরকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে তাদেরকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে বলি। পরে আমি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলি কিন্তু কেউ হামলাকারীদের চিনতে পারেনি। আমি আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। সেখান থেকে হামলাকারীদের সনাক্ত করা হবে। এছাড়া আমি সদর থানার ওসিকে ফোন করেছি ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

তিনি আরও বলেন, চকরিয়ার দুই নেতা বুধবার রাতে যে আমার বাসায় আসবে তা আমি আগে জানতাম না। এছাড়া তারা কমিটি বিলুপ্ত করা, পুনর্বহাল, কর্মী সমাবেশ বিষয়ে কথা বলতে আমার এখানে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট ছিল। এই সময়ে তো আর হামলা কিংবা মারধরের পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, আমার মনে হচ্ছে মোবাইল ছিনতাইকারীরা তাদের মোবাইল ছিনিয়ে নিতেই এই হামলা করেছে। তবে আমি চাই হামলার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, হামলাকারী কারা তারা চিহ্নিত নন। ওই ঘটনায় সদর থানায় এজাহার দেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে বের করবে এখানে কে বা কারা দোষী। পাশাপাশি জেলা আওয়ামীলীগও তদন্ত করবে। এছাড়া আহতদের বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বিষয়টি জানাতে।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা ছাত্রলীগের বাসার নিচে হামলার বিষয়ে কোন খবর এখনও কেউ আমাকে দেয়নি। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন