সীমান্ত পরিস্থিতি সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরে মোকাবিলা করা হবে : বিজিবি মহাপরিচালক

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টারশেল ও গোলাগুলির শব্দে এপারের মানুষদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক।সংঘাত কিছুটা কমে আসলেও মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে তবেঅনেকটা বন্ধ রয়েছে বিস্ফোরণের শব্দ। এ পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বিজিপির আরও ৬৩ সদস্য পালিয়ে আসে।চার ঘণ্টার ব্যবধানে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) আরও এক সদস্য টেকনাফের সীমান্তে দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। পরে তাকে বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিজিবির হেফাজতে মিয়ানমারের মোট ৩২৮ জন রয়েছেন।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা ও বিকালের দিকে উলুবনিয়ার সীমান্ত দিয়ে বিজিপির এই ৬৪সদস্য পালিয়ে আসেন বলে নিশ্চিত করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম।

তিনি জানান, পালিয়ে আসা বিজিপির সদস্যদের অস্ত্র জমা নিয়ে বিজিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত বিজিপি, সেনা ও সাধারণ নাগরিকসহ মোট ৩২৮ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের নিরস্ত্র করে হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে এর আগে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস কর্মী ও আহত সাধারণ নাগরিকসহ পালিয়ে আসা ২৬৪ জন বিজিবির হেফাজতে রয়েছেন। বিজিবির হেফাজতে ২৬৪ জনের থাকাদের মধ্যে ২২২ জন, সেনা সদস্য ২ জন, সিআইডি ৪ জন, লোকাল পুলিশ ৫ জন, স্পেশাল ব্রাঞ্চের ৯ জন, ইমিগ্রেশন বিভাগের ২০, অসামরিক ২ জন রয়েছেন।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ বলা যায়। বিচ্ছিন্ন কিছু শব্দ শোনা গেলেও গোলাগুলির শব্দ তেমন শোনা যাচ্ছে না।

সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বিজিপির বাংলাদেশে প্রবেশের আগে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন আসেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করে মানবিক দিক থেকে আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিং কালে তিনি এসব কথা বলেন। পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালক মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন এবং আহত অবস্থায় চিকিৎসারত বিজিপি সদস্যদের দেখতে যান।

এ সময় বিজিবির মহাপরিচালক দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর থাকার নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয়রতদের বিষয়ে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছে। যারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারাও দ্রুত ফেরত যেতে আগ্রহী।

সীমান্তে সংঘর্ষের জেরে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সংঘর্ষে গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্ত অতিক্রম করে গুলি ও মর্টার শেল আসা এবং হতাহতের বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা চাই, এপারে যাতে গুলি এসে পড়ার ঘটনা শূন্যের কোঠায় এসে পড়ে।

পরিস্থিতি সার্বিক নজরদারি, স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হচ্ছে মন্তব্য করে বিজিবি প্রধান বলেন, বিজিবি সর্বোচ্চ সজাগ এবং ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তে বসবাসকারীদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

সীমান্ত পরিদর্শন শেষে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়রত মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের দেখতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে বুধবার বিকাল ৪ টার দিকে যান বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

এ সময় বিজিবিপ্রধান মিয়ানমারের আহত বিজিপি সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন। কথা বলেন আহত বিজিপির সদস্য ও চিকিৎসকদের সঙ্গে। একই সঙ্গে বিজিবিপ্রধান তাদের ফল উপহার দেন।

আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছে মিয়ানমার সীমান্তবাসীরা

আরও পড়ুন