দোহাজারীতে বিষপানের ১৩দিন পর গৃহবধুর মৃত্যু

স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় দাম্পত্য কলহের জেরে গত ২২ আগস্ট তাসনিম আক্তার(২০) নামের দুই সন্তানের জননী বিষপান করেন। বিষপানের ১৩ দিন পর রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু ঘটে। দোহাজারী পৌরসভার রায়জোয়ারা নতুন পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সে একই এলাকার মোহাম্মদ আলম ওরফে আজমের স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রায়জোয়ারা এলাকার ছালেহ আহমদ খলিফা বাড়ির মৃত নজির আহম্মদের মেয়ে তাসনিম আক্তারের সাথে একই গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলম ওরফে আজমের সাথে ২০১৬ সালে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর কয়েকমাস সুখে-শান্তিতে দিন কাটালেও বিগত চার বছর যাবৎ তাসনিম আক্তারের সাথে তার স্বামী মোহাম্মদ আলম ওরফে আজমের দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার সালিশী বৈঠকে বিষয়টি মিমাংসাও হয়েছিলো।

গত ২২ অক্টোবর স্বামীর সাথে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাগে ও ক্ষোভে বিষপান করেন তাসনিম আক্তার। এরপর তাকে দোহাজারী হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেকে) রেফার করেন। চমেকে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে সে মৃত্যুবরণ করে। ওইদিন রাতে জানাযা নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে নিহতের লাশ দাফন করা হয়।

নিহত তাসনিম আক্তার দুই সন্তানের জননী। তাদের একজন চার বছর বয়সী কন্যা ইসফা এবং এক বছর বয়সী ছেলে আরফাত।

নিহতের মা সকিনা বেগম বলেন, বিয়ের পর কয়েকমাস আমার মেয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার করলেও তার শাশুড়ি ও ননদের প্ররোচনায় মোটা অংকের টাকা দাবি করে বিগত চার বছর যাবৎ তাকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো স্বামী আজম। আমাদের কাছ থেকে টাকা নিতে না পারায় প্রায়ই মারধর করতো তাসনিম আক্তারকে। এবিষয়ে বেশ কয়েকবার সালিশী বৈঠকে সমস্যার সমাধানও হয়েছে। বৈঠকে আর নির্যাতন করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে আমার মেয়েকে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন ভালো থেকে আবারও মারধর করতো। এবিষয়ে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর দোহাজারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে আমার মেয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে। বিগত ২২ অক্টোবর আমার মেয়েকে তার স্বামী আজম প্রচন্ড মারধর করার পর সে রাগে-ক্ষোভে বিষপান করে। চিকিৎসায় গাফিলতি করার দরুণ আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

অভিযোগ অস্বীকার করে নিহতের স্বামী মোহাম্মদ আলম ওরফে আজম বলেন, আমার সাথে আমার স্ত্রীর ছোট-খাটো ভুল বোঝাবুঝি থেকে দাম্পত্য কলহ হলেই আমার শাশুড়ি এসে আমার স্ত্রীকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতো। স্ত্রীকে ফেরৎ আনতে গেলে আমাকে নানাভাবে অপমান অপদস্থ করতো। গত ২২ আগস্ট সামান্য কথা-কাটাকাটির জেরে আমার স্ত্রী বিষপান করে। এরপর সবসময় আমি তার সাথেই ছিলাম। চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে দোহাজারী হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে বেশ কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।

রায়জোয়ারা ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ইস্কান্দার মিয়া বিষপানে গৃহবধুর মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার তাদের দাম্পত্য কলহ নিয়ে সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে সামাজিকভাবে মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। শশুড়বাড়ি থেকে টাকা দাবি করে আজম তার স্ত্রী তাসনিম আক্তারকে প্রায়ই মারধর করতো কিনা সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কেউ কোন ধরণের অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন