পটিয়ায় প্রভাবশালীচক্র কেটে উজাড় করছে ফসলি জমির মাটি

পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের রশিদাবাদে একটি প্রভাবশালী চক্র কৃষকের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে । মাটি কেটে নেওয়ায় এসব জমিতে কয়েক বছর ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

অভিযোগ ওঠেছে, চক্রটি ভুয়া দলিল বানিয়ে জোর করে জায়গা দখল করে মাটি ভরাট করেছে।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, চার মাস ধরে প্রভাবশালী চক্রটির নেতৃত্বে চার-পাঁচজন শ্রমিক নিয়োগ করে বিভিন্ন জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা প্রতিদিন ১০-১৫ ট্রাক মাটি বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছেন। এসব মাটি রাস্তা ভরাট, বসতঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকটা জোর করে ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন তাঁরা।

সোমবার (৩০ জানুয়ারী) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রশিদাবাদ ও এলাহাবাদ এলাকায় ১৫-২০ একর ফসলি জমি থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে জমির বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রশিদাবাদ ২নং ওয়ার্ডের নতুন পুকুরের দক্ষিণ পাশে ৫/৬টি ছোট ছোট ট্রাক করে একটি ৬ গন্ডা নিচু জমি ভরাট করছে।

ওই জমির মালিক আশেক, মাওলানা রফিক ও হাবিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী আবদুল মোতালেব চৌধুরী, মুনসেফ আলী, রমিজ উদ্দিন, আরিফ হোসেন, রাশেদ ও শাহেদ তাঁদের জমির ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে জবর দখল করে রেখেছে। ওই জমিতে অন্য কৃষি জমি থেকে মাটি এনে দিনে রাতে ভরাট করছে। বাধা দিতে গেলে ওই প্রভাবশালীরা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

রশিদাবাদের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, জোর করে ফসলি জমিতে মাটি ভরাট করায় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিচালক, পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পটিয়ার সহকারী কমিশনার ভূমির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি । এছাড়া ভুয়া দলিলের বিষয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর মামলা নং-৫২০/২২ দায়ের করি। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তারা বলেন, ‘ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়ে ৩০ জানুয়ারি হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই ভূমিদুস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শোভনদন্ডী ইউনিয়নের একাধিক কৃষকের অভিযোগ, তাঁদের জমি থেকে প্রভাবশালী একটি চক্র মাটি কেটে নিয়েছেন। তাতে তাঁদের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জমির মধ্যে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তারা এবার জমিতে কোনো ফসল চাষ করতে পারেননি। মাটি কাটতে অনেক নিষেধ করা হলেও তারা শোনছেনা। বাধা দিতে গেলে তাদের বাহিনী দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

পাশ্ববর্তী পটিয়ার খরণা ইউনিয়নের কৃষক সাহেদ আলী বলেন, তার ১০ বিঘা জমি থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। মাটি তুলে বিক্রি করে দেওয়ায় প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও তার জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবার তিনি ওইসব জমিতে কোনো চাষাবাদ করতে পারেননি।

পটিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, জমিতে ভালো ফসল উৎপাদনের উপযোগী হলো উপরিভাগের মাটি। ওই মাটি প্রতিনিয়ত কেটে ফেলার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। জমির উপরিভাগের মাটি একবার কেটে নিয়ে গেলে তা পূরণ হতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে।

মানবাধিকার ও পরিবেশ আইনজীবী জাফর হায়দার বলেন, ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ আইনে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নেতা সাংবাদিক আলিউর রহমান বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলায় এর উর্বরতা হারিয়ে যায়। তবে ভূমিদস্যুরা যেভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে, তাতে ওই সব এলাকার কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি।’

আরও পড়ুন