উপকূলীয় এলাকা বাঁশখালী

আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ টেকসই বাঁধ, জলে প্লাবনে ভাসে জীবনের স্বাদ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব পড়েছে বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে। ২৪ অক্টোবর রাত ১০টা থেকে বাড়তে থাকে জোয়ার। অতিরিক্ত জোয়ারের প্রভাবে বেঁড়ীবাধ ভেঙে কোথাও কোথাও উপঁচে পড়ে বাঁধ বেয়ে উপকূলীয় এলাকার খানখানাবাদ, বাহারচড়া, সরল, কাথরিয়া, গন্ডামারা, শিলকূপ, চাম্বলের পশ্চিমাঞ্চল, শেখেরখীল, পুঁইছড়ি, ছনুয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। বড় ধরণের কোন দূর্ঘটনা না ঘটলেও এতে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৭০ভাগ বসতঘরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। বাঁশখালীতে উপকূল সংলগ্ন বিভিন্ন ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চল পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, পুকুর ও রাস্তাঘাট। জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে অনেক এলাকায় পানিবন্দি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ধানি জমিসহ ফসলি বিভিন্ন জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দিনভর বৃষ্টিবর্ষণ ও ধমকা হাওয়া বাতাসে বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে বিচ্ছিন্ন আছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

 

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সমুদ্রের জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে বিভিন্ন ধরণের ফসলি জমি। উপজেলার নিম্নাঞ্চলে সবজি ক্ষেত ও ধানি জমি পানিতে ডুবে গেছে। এতে ক্ষেত নষ্ট হয়ে কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতির আশংকা করছে। প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেঁড়ীবাধ নির্মাণ করা হলেও স্বপ্নের টেকসই বেঁড়ীবাধ এখনও অধরাই থেকে গেল। বাঁশখালীর প্রায় ২৬ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত এলাকার বৃহত্তম অংশ জুড়ে এখনও অরক্ষিত বেঁড়ীবাধ। বর্ষা আসলে, প্রাকৃতিক দূর্যোগ আসলে এখনও ভয়ে নির্ঘুম রাত পোহাতে হয় উপকূলের লোকজনকে। বিশেষ করে খানখানাবাদ, বাহারছড়া অংশে, সরলে, শীলকূপের জালিয়াখালী জলকদরখাল সংলগ্ন বেঁড়ীবাধ, গন্ডামারা-শীলকূপ হয়ে পশ্চিম চাম্বল জলকদর খাল, বাংলাবাজার হয়ে শেখেরখীল ফাঁড়িরমুখ, ছনুয়াসহ এসব উপকূলীয় অঞ্চলে এখনো নির্মাণ করা হয়নি পূর্ণাঙ্গ টেকসই বেঁড়ীবাধ। জোয়ারের মাত্রা বেড়ে গেলে, বৃষ্টি-বন্যায় সহসা পানি ডুকে পড়ে এ অঞ্চলের লোকালয়ে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত রাতে জালিয়াখালী জলকদর খালের বেঁড়ীবাধ ভেঙ্গে শীলকূপ ২নম্বর ওয়ার্ডের লোকালয়ে, ১ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াঘোনা, নুরু মার্কেট এলাকায়, চাম্বলের পশ্চিম চাম্বল গোলাখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। শেখেরখীলের ছনুয়া-শেখেরখীল সংযোগ ব্রীজ হতে সরকার বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে বেড়ীবাঁধ বেয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। পুইছড়ির দক্ষিণ পুঁইছড়ি, পশ্চিম পুঁইছড়ির লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। গন্ডামারার বড় ঘোনার অরক্ষিত বেঁড়ীবাধ বেয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ছনুয়ার বিভিন্ন অংশে বেড়িবাঁধ উপঁচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। খানখানাবাদ-কদমরসূল-প্রেমাশিয়া অংশে বেড়ীবাঁধ ছুইঁয়ে পানি প্রবেশ করেছে। যার ফলে বসতঘরে পানি ডুকছে, তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল।

শেখেরখীল থেকে স্থানীয় মোর্শেদুল হক জানান, ‘আমাদের শেখেরখীল ব্রীজ হতে সরকার বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বেঁড়ীবাধ অরক্ষিত। গতকাল রাতের জোয়ারের পানি অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ ভেঙ্গে কয়েকটি পয়েন্টে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। এতে সংলগ্ন এলাকার ৯৫ ভাগ বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে বলে জানান। তলিয়ে যায় মাছের প্রজেক্ট ও ধানি জমি। যেকোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে এ অঞ্চলের লোকজন থাকে আতংকে।’
শীলকূপ ইউপির সদস্য সিদ্দিক আকবর বাহাদুর বলেন, ‘জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় জালিয়াখালী জলকদর খালের ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ডুকেছে। এতে নোয়াপাড়া, হেডপাড়ার বেশকিছু বসতঘরে পানি ডুকেছে। এ এলাকার লোকজন এখনও পানি বন্ধি বলে জানান তিনি।’

সরল থেকে বোরহান উদ্দিন জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে অতিরিক্ত জোয়ারের ফলে আমাদের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে অনেক কৃষকের জীবন জীবিকার স্বপ্নের টমেটো ক্ষেত ডুবে যায়। এতে করে তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, ‘বাঁশখালীর জলকদর খালের অরক্ষিত বেঁড়ীবাধ সংস্কারের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে আমাদের একটি প্রকল্প নিশ্চিত আছে। জলকদর খালের দু’পাড়ের ভাঙনের কাজ সংস্কার করা হবে। নদী রক্ষার কাজসহ এসব বিষয় মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।’ কবে নাগাদ জলকদরের ভাঙনরোধে বেঁড়ীবাধ নির্মাণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টেইকসই কাজ করতে অনুমোদন হওয়া লাগে। বড় আকারের কাজ এ মুহূর্তে সম্ভব না। বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে অতীব জরুরী কাজগুলো দ্রæতই সমাধান করা হবে।’

আরও পড়ুন