দোহাজারীর পাহাড়ে সবুজ পান, যেনো গাইছে জীবনের জয়গান
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার হাতিয়াখোলা, লালুটিয়া, মাস্টারঘোনা, জঙ্গল জামিজুরী এলাকায় সবুজে মোড়ানো পার্বত্য এলাকা যেনো অপার সম্ভাবনাময় একখন্ড ভূ-স্বর্গ। দোহাজারী ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়া ও ঢালুতে এতদিন সামাজিক বনায়নের পাশাপাশি পেয়ারা, লিচু ও লেবুসহ বিভিন্ন ফলদ বাগান গড়ে উঠলেও পাহাড়ের চূড়ায় পান চাষে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। বিস্ময়কর হলেও দোহাজারী পৌরসভার হাতিয়াখোলা এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় ২৪শতক জমিতে মিষ্টি পান চাষ করেছেন মহেশখালী শাপলাপুর ইউনিয়নের আবুল হোসেনের ছেলে জিয়াউর রহমান (২০)।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাতিয়াখোলা বাগিচা পাহাড় নামক স্থানে চতুর্দিকে পাহাড় বেষ্ঠিত বরজে পাঁচজন শ্রমিক নিয়ে পানের লতার যতœ নিচ্ছেন এই চাষী। এক স্বজনের মাধ্যমে পাহাড়ের চূড়ায় পান চাষের কৌশল সর্ম্পকে ধারণা নেয়ার কথা জানিয়ে জিয়াউর রহমান বলেন, “মিষ্টি পানের জন্য বিখ্যাত আমার জন্মস্থান মহেশখালী থেকে ৩৬ হাজার টাকার কালো মিঠা জাতের ২৫ হাজার টুকরা পান লতা এনে হাতিয়াখোলা বাগিচা পাহাড়ের ঢালুতে ২৪ শতক জমিতে চাষ শুরু করেছি।” সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে পানের বরজে লতা রোপণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রথমবারের মত পাহাড়ের ঢালুতে পানের বরজ করেছি। ধীরে ধীরে লতা বড় হচ্ছে এবং পুরো বরজ সবুজ পানে ভরে যাচ্ছে।”
আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে পান বিক্রি করা শুরু করতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, “২৪ শতক জমিতে পানের আবাদ করতে সার, খৈল, জৈবসার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো। একটি সুস্থ পান গাছ থেকে ৮০-১৪০টি পর্যন্ত পান পাওয়া যাবে। বর্তমানে মানভেদে প্রতি বিড়া পান ১০০-১৪০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ভালো ফলন এবং বাজারে দাম থাকলে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি করতে পারবো।” সার, খৈল, জৈব সার, কীটনাশক না দিলে পানের বরজ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। তাই পান চাষের সম্প্রসারণে সরকারি সহযোগিতা দাবি করেন তিনি।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী বলেন, “বাংলাদেশে পানের চাষ একটি সম্ভাবনার ব্যবসা। পানের চাষ ও ব্যবসা করে অনেক দরিদ্র পরিবার বর্তমানে সাবলম্বী হচ্ছেন। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি ক্ষেত্রে অনেক অনুদান, ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সরকার যদি পান চাষীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে কৃষি ঋণ দেন, তাহলে এই ক্ষেত্রে একটি বিপ্লঅবের সম্ভাবনা রয়েছে।“
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষ্টি কর্মকর্তা কৃষিবিদ স্মৃতি রাণী সরকার বলেন, “চন্দনাইশে পান চাষের কোন প্রকল্প বা প্রদর্শনী নেই। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৩ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়। তন্মধ্যে দোহাজারী পৌরসভার দিয়াকুল এলাকায় ৪ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়। পান চাষীরা কোনো ধরনের সরকারি ঋণ সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা পায় না। আমরা পানের বরজে পান লতার কান্ড পঁচা ও ভাইরাসে পান পাতা ঝড়া রোধকল্পে চাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।”