বিলাসী জীবনের স্বপ্নে বিভোর শ্রমজীবীদের হাতে বিমান ধর খুন

চট্টগ্রামের পটিয়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধর খুনের প্রাথমিক রহস্য অবশেষে উদঘাটনে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। পটিয়া থানা পুলিশের খাঁচায় বন্দি রাজমিস্ত্রী আইয়ুব আলীর দেওয়া স্বীকারোক্তিমমূলক জবানবন্ধীতে খুনের রহস্য বেরিয়ে এসেছে।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৯ টায় পটিয়া থানায় প্রেসব্রিফিংয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর হাকিম নাজমুন নাহার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী দেয় রাজমিস্ত্রী আয়ুব আলী। এর আগে গত শুক্রবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আইয়ুব আলী (১৯)কে তার মামার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আইয়ূব আলী জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের নুরুল আজগরের পুত্র।

জবানবন্ধীতে আইয়ুব আলী জানায়, তারই প্রতিবেশী রিকশা চালক জিল্লুর রহমান তাকে অতি অল্প সময়ে কোটিপতি হয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখায়। এ জন্য তারা উপজেলার জঙ্গলখাইন এলাকার বিটা সেন্টার এলাকায় গিয়ে পরিকল্পনা করে ধনী হতে একটি অপরাধ সংগঠিত করতে হবে। এতে তারা টার্গেট করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে। তারা জানত চট্টগ্রাম নগরে বিমান ধরের ৭টি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন রাতে বিমান ধর দোকান বন্ধ করে নগদ টাকা ও স্বর্ণের বার নিয়ে বাড়িতে ফিরে। এমন ধারণায় তাকে আটকানোর পরিকল্পনা নেয়।

বিমান ধরকে ধরার জন্য ৪ ও ৫ সেপ্টম্বর ২দিন তারা অপেক্ষা করে লড়িহরা নির্জন এলাকায়। লোকজন বেশি থাকায় দু’দিন তারা বিমান ধরকে আটকাতে পারেনি। ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টায় বিমান ধর মোটর সাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে ঘটনাস্থলে পৌছলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা রিকশাচালক জিল্লুর রহমান রিকশা দিয়ে বিমান ধরের মোটর সাইকেল গতিরোধ করে। এসময় বিমান ধরের সাথে তাদের কথাকাটাকাটি হয়। হত্যাকারীরা তার নগদ টাকা ও স্বর্ণের বার খোঁজাখুজি করতে চাইলে বিমান ধর বাধা দেয়। এক পর্যায়ে জিল্লুর হাতে থাকা হাসুয়া (দা) দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে। তাতে অপারগ হলে আইয়ুব আলীর হাতে থাকা দা দিয়ে তার গলায় আঘাত করার জন্য বলে জানায় । আইয়ুব আলী বিমান ধরের গলায় দা বসিয়ে দিলে ঘটনাস্থলে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে বিমান ধরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসতে দেখে আইয়ুব আলী বিমান ধরকে জবাই করে পার্শবর্তী জমির উপর দিয়ে ও রিকশা চালক জিল্লুর রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।

গোপন সূত্রের ভিত্তিতে পটিয়া থানার ওসি তদন্ত রাশেদুল ইসলাম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সঞ্জয় ঘোষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর রিকশা চালক জিল্লুর রহমান ও গৈড়লা এলাকার বাপ্পু ধরকে গ্রেপ্তার করে। তাদের গ্রেপ্তারের পর ঘটনার জট খুলতে শুরু করে। পুলিশ শুক্রবার আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকারীরা পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের বিবরণ দিলে তাদের জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করা হয়।

পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান জানান, এ হত্যাকান্ডের মোটিভ উদ্ধারে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিরলস কাজ করেছে। এঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমরা দ্রুততম সময়ের বিমান ধরের হত্যাকান্ডে জড়িতদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করব। তবে তিনি এ আসামীদের গ্রেপ্তারের পেছনের রহস্য তুলে না ধরলেও তাদের নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের মোটিভ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান।

আরও পড়ুন