দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া লেকের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন। ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই লেকের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হন পর্যটকরা। পর্যটকদের মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করে লেকের স্বচ্ছ জলরাশি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় বেশ কিছুদিন পর্যটকে ভাটা পড়ে মহামায়ায়। এরিমধ্যে এবারের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরে উঠে লেকের একাংশ। যা লেকের প্রকৃত রুপ ফুটে উঠতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় বন বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষ লেকের সৌন্দর্য্য ফেরাতে প্রায় ১ মাসেরও বেশি সময়েও উদ্যোগ না নেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন লেকে আসা পর্যটকরা। অবশেষে বিষয়টি বিডি ক্লিন মিরসরাই উপজেলা টিমের সদস্যদের নজরে এলে তারা বুধবার (২ অক্টোবর) দিনভর রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কার করে লেকের স্বচ্ছ জলরাশি উপহার দিতে সক্ষম হয়।
জানা যায়, জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি ঢল রোধ এবং শুষ্ক মৌসুমে কৃষি খাতে সেচ সুবিধার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে মহামায়া খালের ওপর স্লুইস গেট নির্মাণ করে পাউবো। পরবর্তী সময়ে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রকল্পটি রূপ নেয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেকে। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সেচ প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া লেক দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় আবর্জনা ও কচুরিপানা জমে ভরাট হয়ে যায়। চলতি বছর পর্যটন কেন্দ্রটি প্রায় ২ কোটি টাকায় ইজারা দেয়ো হলেও পরিষ্কারের দায়িত্ব নিচ্ছে না বন বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দিন দিন লেকের পানি হয়ে উঠে দুর্গন্ধময়। অবশেষে বিষয়টি বিডি ক্লিন মিরসরাই উপজেলা টিমের সদস্যদের নজরে এলে তাদের ফেনী জেলা টিমের ১৮ সদস্য ও মিরসরাই উপজেলা টিমের ১২ জন সদস্য এবং চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ থেকে ১৫ সদস্যেও টিম বুধবার দিনভর রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কার করে লেকের স্বচ্ছ জলরাশি উপহার দিতে সক্ষম হয়।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের মিরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহান শাহ নওশাদ বলেন, লেকের পানি পরিষ্কারের দায়িত্ব পাউবোর। পানি পরিষ্কার ও সড়ক সংস্কারে আমরা গত বছর মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। তবে সড়কটি সংস্কার করা হলেও পানি পরিষ্কার করা হয়নি। গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ডিএফও বরাবর আরো একটি চিঠি লিখেছি। কিছুদিন আগে পাউবোর এক কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে তিনি লেক পরিষ্কারের জন্য বরাদ্দ নেই বলে জানান।
তিনি আরো জানান, লেকের সৌন্দর্য্য ফেরাতে বিডি ক্লিন মিরসরাই উপজেলা টিম পরিষ্কার পরিচ্ছতা অভিযানের উদ্যোগ নিলে তাদের টিমের সাথে আমাদের ১৫ সদস্যও যোগ দেয়। বুধবার দিনভর চলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এখন লেকের সৌন্দর্য্য পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন মিরসরাই টিমের সমন্বয়ক নুরের নবী জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া লেক আমাদের মিরসরাইয়ের সম্পদ, এটি দেশের সম্পদ। এই সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব আমরাও এড়াতে পারি না। সম্প্রতি মিরসরাইয়ে ভয়াবহ বন্যার প্রভাব দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া লেকেও পড়েছে। লেকের স্বচ্ছ জলরাশির দেখা মিলছিলনা কচুরিপানা ও আবর্জনার কারণে। পরে বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে আমরা বুধবার দিনভর রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে লেকের পূর্বের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। ওইদিন সকাল ৯ টা থেকে আমাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৬ টায়। এতে অংশ নেন বিডি ক্লিন মিরসরাই উপজেলা টিমের ১২ জন সদস্য, বিডি ক্লিন ফেনী জেলা টিমের ১৮ জন সদস্য। পাশাপাশি আমাদের এই অভিযানে সহযোগিতা করে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ১৫ জন সদস্য।