সংবাদ সম্মেলন জায়গা দখলমুক্ত করার দাবি কর্ণফুলী খোয়াজনগর স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে প্রভাবশালীদের কাছে জবর দখলে থাকা খোয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।

শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুর ১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস.এ রহমান হলরুমে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ লিখিত বক্তব্যে জানান, ১৯৬২ সালে (দলিল নং- ৫৭৩৩) তৎকালীন ডেপুটি কমিশনারের কাছে জনৈক জামাল হোসেন সাফ কবলায় ১ একর জমি বিক্রি করেন বিদ্যালয়ের নামে। সেই থেকে বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরটি বিদ্যালয়ের দখলে ছিল এবং বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে খেলাধুলা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হত। ২০১২ সালে যখন বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে ৩ টি নতুন ভবন নির্মাণের প্রকল্প আসে, তখনই দেখা দেয় বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত বিরোধ। স্কুলের জমিতে ভবন নির্মাণ করতে গেলে জনৈক জামাল উদ্দীনের পরিবারের বাধায় ভবনগুলো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে এলাকার অভিভাবক, বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী, পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ ২০১৬ সালে মানববন্ধন করে ভূমিমন্ত্রীসহ তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পটিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। এরমধ্যে পটিয়া আদালতে (মামলা নং ৩৭/১৭ইং) বি.এস সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়ের পরিচালনার দায়িত্ব ২০১০ সাল পর্যন্ত জমি বিক্রি দাতার পরিবারের উপরই ন্যস্ত ছিল। কিন্তু একই বছরে নতুন কমিটি আসার পর বিদ্যালয়ে নতুন ভবন, মাঠ এবং বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হওয়ায়, পরবর্তীতে দলিল অনুযায়ী যাচাই বাছাই করতে গিয়েই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।। কবলা দাতা জামাল হোসেনের পুত্র আবুল কালাম বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা হাকিমের আদালত চট্টগ্রাম মহানগর (মিচ মামলা নং ১৭৬৬/১৯) ১৪৫ ধারা দায়ের করেন। এতে দু-পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা ও শুনানী শেষে দীর্ঘ তিন বছর পর বিজ্ঞ আদালত আদেশ প্রদান করেন। প্রতিপক্ষকে বিদ্যালয়ের জায়গায় (বি.এস দাগ ২০২৭) প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।’

লিখিতি বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‍নিষেধাজ্ঞার পর আবুল কালাম বিজ্ঞ এডিএম এর আদেশের উপর ফৌজদারী রিভিশন (নং ১০৮২/২০২২) করেন (গত ১০ এপ্রিল) অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে। যার আদেশ নং ৫-এ অত্র ফৌজদারী রিভিশন শুনানী নামঞ্জুর করে এডিএমের আদেশ বহাল রাখেন। ফলে এখানেও তাদের দাবি অগ্রাহ্য হয়। পরে সহকারি কমিশনার ভূমি কর্ণফুলী উপজেলা বরাবরে আবুল কালামের নাম জারির জমাভাগ (মামলা নং ১-১৩৯৩/২০১৪) এর বিরুদ্ধে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আপত্তি দেন। যার মিচ মামলা নং ৪৮/২২। যার বি.এস খতিয়ান নং ৯৬৩, বি.এস দাগ ২০২৭ হতে কর্তন করে বিদ্যালয়ের নামে নামজারির আদেশ দেয়ার জন্য আবেদন করেন। এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) কর্ণফুলি উপজেলা দু-পক্ষের দলিল পত্রাদিসহ শুনানি করেন। শুনানির পর সহকারি কমিশনার ভূমি আদেশ দেন আবুল কালামের নাম জারির জমাভাগ বি.এস ৫৬০৩ নং খতিয়ান বাতিল করে মূল বি.এস ৯৬৩ নং খতিয়ানে ফেরত নিয়ে যান।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, প্রতিপক্ষরা মামলার রায় না মেনে বিদ্যালয়ের ৮৫ শতক জমি দখলে রেখেছেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন জনের দখলে এ জমি। এরমধ্যে রায়মূলে আবুল কালামের খতিয়ান বাতিল করে ৫ গন্ডা জমি পেলেও, তারা দখল ছাড়ছেন না। এক একর জমি থেকে বর্তমানে স্কুলের দখলে রয়েছে মাত্র ১৫ শতক। বাকি জমি প্রভাবশালী কিছু ভূমিদস্যুদের দখলে। যদিও শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ, নতুন ভবন নির্মাণে জমি দরকার। এ জন্য সভাপতি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-খোয়াজনগর সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সামিরা পারভিন, সহকারী শিক্ষিকা আছমা আকতার, শ্যামলী সেন, আনোয়ারা খানম ছিদ্দিকা, শেগুপ্তা নাসরিন আইরিন, রোখসানা ফেরদৌস মনি, সংগীতা দে, সুমি দত্ত, প্রেমানন্দ মল্লিক, শান্তা দত্ত, নিলুফা আক্তার ও নুসরাত জাহানসহ প্রমূখ।

আরও পড়ুন