কারো অনুকম্পা আর জনসমর্থন এককথা নয় : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা কোনো মতেই ক্ষমতা হতে পারেনা। এটা জনগণের সেবা করার একটি দায়িত্ব মাত্র। আর এ দায়িত্ব কোনো দেশ বা প্রভুর দয়া নয়, জনরায়েই তা প্রতিফলন ঘটে। যারা দেশ সেবার সুযোগকে ক্ষমতা কিংবা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মনে করেছে তারা যুগে যুগে বিতাড়িত হয়েছে, তাদের অহমিকার পতন ঘটেছে। সুতরাং চেয়ারকে দায়িত্ব মনে করে মানবিক ও সম্প্রীতির রাষ্ট্র বিনির্মানে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি উদ্যোগে ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত শীর্ষক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

তারেক রহমান বক্তব্যের শুরুতে বলেন, চট্টগ্রাম, এই সেই চট্টগ্রাম যেখানে থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা যে চট্টগ্রাম থেকে হয়েছিলো আজ আবারও সেই চট্টগ্রাম থেকেই আমরা দেশ বির্নিমানের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরছি। একত্রিশ দফা শুরুতে ছিলো ২৭ দফা। পরবর্তীতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তা ভাবনা মতামতকে নিয়ে তা রূপান্তরিত হয়েছে ৩১দফায়। তাই মোটামোটিভাবে বলা চলে, এতে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে। এর বাইরে আর তেমন কিছু থাকার কথা নয়। তবে এটা কোনো ধর্মগ্রন্থ নয়। যেকোন সময় দেশের প্রয়োজনে এতে দফা সংযোজন বিয়োজন হতে পারে।

তারেক রহমান বলেন, নিশিরাতের ভোট কিংবা ব্যালটবাক্স ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, বিরোধীদলবিহীন যেনোতেন উপায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা যায়, স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিজমের মাধ্যমে অর্থলোপাট করে ক্ষমতায় কিছুদিন টিকে থাকা যায় কিন্তু জনগণের মনে জায়গা পাওয়া যায় না। তাই দিনশেষে দেশ ছেড়ে পালিয়েও যেতে বাধ্য হয় অনেক স্বৈরশাসক।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, মানুষের আস্থা বিশ্বাস ধরে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। আপনাদেরকেইে জনগণের কাছে যেতে হবে। ৩১দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের দর্শন নিয়ে যেতে হবে, আগামী নির্বাচনে ভোট চাইতে যেতে হবে। সুতরাং এমনকিছু করা যাবে না, যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামেও এমন কিছু ঘটেছে, যাদের বিরুদ্ধে দল কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ৫ তারিখের পর আমাদের কিছু কিছু নেতাকর্মী মনে করেছে আমরা সরকারে এসে গেছি। তাদের বডিল্যাংগুয়েজ চেঞ্জ হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে আমরা এখনও সরকার গঠন করিনি কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাইনি। আমরা মূলত এখনও বিরোধী দলে আছি। তাদের সেইসব আচরণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় দল, দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, হচ্ছে। কঠোরভাবে নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ারি করে বলেন, এখানে উপস্থিত প্রত্যেকে বিএনপি’র প্রতিনিধি। সুতরাং আপনাদের ব্যক্তিগত দুর্নাম হলে সেটা বিএনপিকেও ঘায়েল করবে। কারণ বলা হবে, বিএনপি অমুক এ কাজ করেছে। সুতরাং সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, আপনি যখন আপনার নিকটাত্মীয় স্বজেনর বাসায় যান, আপনি নিশ্চয় চলাফেরা উঠাবসা, আচার আচরণে এমন পরিচয় দেন যাতে সেই আত্মীয় আপনার সম্পর্কে কোনো নেগেটিভ ধারণা না হয়। আপনি যখন এলাকায় পরিচিত বিএনপি’র প্রতিনিধি হিসেবে, কেন আপনি এমন কিছু করবেন, আপনার যেই কথা, আপনার যে বিহেভিয়ার, আপনার যে কাজের দ্ধারা দলের ইমেজ, দল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কেন এটা আপনি করবেন ? আপনার এলাকার জনগণ আপনার পরিচিত। দু’দিন পর যখন ভোট হবে, তখনতো আপনি দলের প্রতিনিধি হিসেবে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইবেন। আপনি কোন মুখে তাদের সামনে যাবেন ?

তারেক রহমান আরও বলেন, দেশের বিরুদ্ধে অদৃশ্য অপশক্তির ষড়যন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে। অপতৎপরতা ঠেকাতে প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনীর বিকল্প নেই। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। ৩১দফা তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের আরও চাহিদা মতামত থাকলে সেটাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

তারেক রহমান বলেন,  প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর মাধ্যমে আধুনিক বিএনপি’র ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা স্বচ্ছ ধারণা অর্জন, জানা বুঝা এবং তা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে নিয়ে যাওয়ার জন্য যোগ্য নেতাকর্মী সৃষ্টি যেমন লক্ষ্য, তেমনি আদর্শ, সৎ ও নিষ্ঠাবান না হলে যে জ্ঞানী হলেও পরিত্যায্য হবে সেটা জানিয়ে দেয়ার একটা টার্গেট থাকে প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে। সুতরাং কেউ দলের চেয়ে বড় নয়। যে-ই অপরাজনীতির সাথে জড়িত থাকবে, দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।

তিনি বলেন, ধৈর্য্য ধারণের বিকল্প নেই। যত উসকানী আর ষড়যন্ত্রই হোক না কেন ধৈর্য্য ধরে মোকাবেলা করতে হবে। প্রতিটা নেতাকর্মীকে একেকজন জিয়ার আদর্শের ধারক বাহক হতে হবে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাজ যাতে গতিশীল হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিভাগের ৮শ ৫৯জন নেতাকর্মী অংশ নেন। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মোশারফ হোসেনের সঞ্চালনায় উক্ত কর্মশালায় জাতীয়, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি নেতাকর্মীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রায় টানা ৪৫মিনিট চলে এ প্রশ্নোত্তর পর্ব।

আরও পড়ুন