শাহ আলমের ফাঁকি, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে উড়বে পাখি

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে সবজি চাষের জন্য লিজ নিয়ে তিন একর জায়গা জুড়ে কৃত্রিম জলাশয় সৃষ্টি করে মাছ চাষের জন্য খননের অভিযোগ ওঠেছে ওই সংস্থারই চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী শাহ আলমের বিরুদ্ধে। তিনি লিজ নিয়ে এই জায়গা আরেকজনকে সাব লিজ দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিমানবন্দর এলাকায় জলাশয় করে মাছ চাষ করা হলে সেখানে পাখির আনাগোনা বেড়ে বিমান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

বার্ড হিট অথবা পাখির আঘাত আকাশপথে পাইলটদের কাছে চরম আতঙ্কের বিষয়। এই পাখির আঘাতে অনেক সময় উড়োজাহাজকে জরুরি অবতরণ করতে হয়। বড় দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে অতীতে। সে জন্য নিরাপদ আকাশপথের জন্য পাখিমুক্ত আকাশের কথা বলা হয়। পাখি তাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষ বার্ড শ্যুটারও নিয়োগ দিয়েছে। যেখানে পাড়ি তাড়ানোর এত আয়োজন, সেখানে পাখির সমাগম ঘটাতে উল্টো জলাশয় স্থাপন করে বিমানবন্দর এলাকায় পাখিদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আর এই কাজটি করছেন প্রশাসন শাখার অফিস সহায়কের কাজ না করে ইসিআর (ইকুইপমেন্ট কন্ট্রোল রুম) শাখায় ২৬ বছর ধরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অঘোষিত প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত শাহ আলম। এদিকে বিমানবন্দর এলাকায় জমি লিজ নিয়ে জলাশয়ে মাছের প্রজেক্ট করে বিমান বন্দরকে ঝুঁকিতে ফেলছেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত, যদিও কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানেরই অংশ বলছেন।

জানা যায়, বিমানবন্দরের স্পর্ষকাতর এলাকায় মূলত সবজি চাষের জন্য বিমানবন্দরের প্রশাসন শাখার অফিস সহায়ক শাহ আলম ৩০ হাজার টাকায় তিন বছরের জন্য রানওয়ের পাশে পতিত জমি ইজারা নেন। সবজি চাষের জন্য এই জমি লিজ নেয়া হলেও সেখানে তিনি বিনানুমতিতে মাছ চাষের জন্য জলাশয় খনন করে বিমানবন্দরকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। এ পুকুরের চারপাশে বাঁধ দেয়ার ফলে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি চলাচল ব্যহত হবে। পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পাশের বিজিবি এবং নেভাল হ্যাংগার, বিমানবন্দর আবাসিক এলাকা ও রানওয়ে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ বিঘ্নিত হবে। কিন্তু সব নিয়ম নীতিকে অগ্রাহ্য করে সেখানে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শাহ আলম। বিমানবন্দরের আবাসিক এলাকায় বিজিবি ও নেভাল হ্যাংগারের উত্তর পাশের দেয়াল থেকে ভিওআরের (ভয়েস ওভার রেটিং) আনসার পোস্টের পাশের রোড পর্যন্ত প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে এই কৃত্রিম জলাশয় স্থাপনের কাজ শেষ দিকে। আনুমানিক বিশ ফুট গভীরতার এ পুকুর খনন করা হয়েছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবজি চাষের জন্য বরাদ্দ নেয়া সেই তিন একর জায়গা শাহ আলম নিজে চাষ না করে বহিরাগত পেয়ার আহম্মদ নামের একজনকে সাব-ইজারা দিয়েছেন। বিমানবন্দর এলাকায় বহিরাগত কাউকে ইজারা দেয়ার ফলে নিরাপত্তাশঙ্কাও তৈরী হবে। বিমানবন্দর এলাকায় বহিরাগত প্রবেশের ফলে ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের ভিওআর, ট্রান্সমিটিং স্টেশন, আবাসিক এলাকার পানির পাম্প, এ এফ এল এস (এয়ার ফিল্ড ল্যান্ডিং সিস্টেম স্টেশন), রানওয়ের গুরুত্বপূণ স্থাপনার আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল, লাইট, লাইট ফিটিংস, ট্রান্সফরমারসহ নানা যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন চোর ধরাও পড়েছে।

বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসনিম আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সেখানে কৃত্রিম জলাশয় সৃষ্টির বিষয়টি সঠিক নয়। এখানে ক্লিনিং কার্যক্রম চলছে। জায়গাটি নিচু হওয়ায় হয়তো খনন মনে হচ্ছে। তাছাড়া ঝোপঝাড় বেশি হওয়ায় হাতে পরিষ্কার সময় সাপেক্ষ ও খরচ বেশি হয়। তাই স্কেভেটর দিয়ে পরীষ্কার করা হচ্ছে। মূলত পরিষ্কারের পর কর্মচারীরা যদি কিছু টুকটাক চাষাবাদ করে তাতে সমস্যা নাই। তাছাড়া লিজ নেয়া জায়গা অন্যকাউকে সাব-লিজ দেয়ারও সুযোগ নেই। তারপরও আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

বিমানবন্দর কর্মচারী কল্যাণ সংঘের সেক্রেটারী আব্দুল হাকিম সরকার বলেন, এখানে খনন করে জলাশয় সৃষ্টি করে মাছ চাষের কথাটি বেমালুম মিথ্যা। জায়গাটি নিচু, বর্ষাকালে পানি জমে। তাছাড়া জোয়ারের সময়ও পানি আসা যাওয়া করে। এখানে বাঁধ দেয়া হয়নি। পানি আসা যাওয়া করার পথ আছে। জায়গাটা নিচু হওয়ায় খনন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

জানতে চাইলে শাহ আলমের কাছ থেকে লিজ নেয়া পেয়ার আহম্মদ বলেন, বিমানবন্দরের কর্মী শাহ আলমের কাছ থেকে মাছ চাষের জন্য জায়গাটি ভাড়া নিয়েছেন। মাছ চাষের জন্য জলাশয় তৈরি করতে মাটি কাটা হচ্ছে।

বিমানবন্দর থেকে জমি ইজারা পাওয়া শাহ আলমকে ফোন করা হলে তিনি সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে উল্টো সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

আরও পড়ুন