বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার বিপ্লবে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে ৫ই আগষ্ট। নোবেল বিজয়ী ড.মুহাম্মাদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার গঠিত হয়েছে ৮ই আগষ্ট। ভেঙে দেওয়া হয়েছে আগের মন্ত্রীসভা, পার্লামেন্ট; বহিস্কার করা হয়েছে স্বৈরাচারের সময় সুবিধাভোগী পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর প্রায় সকল উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা; কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে আশ্চর্য্যজনক ব্যতিক্রম। নাম-মাত্র কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক রাষ্ট্রদূত বিদায় নিলেও বহাল তবিয়তে আছে স্বৈরাচারী আমলের মজবুত সিন্ডিকেট।
তৎকালীন স্বৈরশাসকের পররাষ্ট্র সচিব সহীদুল হকের তত্ত্বাবধানে এ সিন্ডিকেটে আছে কয়েকজন উর্ধ্বতন ও মাঝারী মানের কর্মকর্তা, বাংলা জমিন ও মানব-ট্রিবিউন নামক দুই পত্রিকার দু’জন ভাড়ায়-খাটা সাংবাদিক মোটা মিজান ও পাতলা শাহরিয়ার এবং কয়েকজন সুশীল সমাজের লোক। তারা সবাই একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা-সংস্থার এজেন্ট এবং তাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মন্ত্রনালয়ের গুরুপ্তপূর্ণ সব পোষ্টিং ও প্রমোশন হয়ে আসছে। মন্ত্রনালয়ের সকল টেন্ডার বিশেষত দৈনন্দিন সরবরাহগুলি এ চক্রই নিয়ন্ত্রন করে। নতুন বানানো ভবনটির কাজও তাদের লোকজনই পায়। সবচেয়ে মজার কথা, মন্ত্রনালয়ের বাৎসরিক সমস্ত ছাপার কাজ যেমন ডায়েরী, ক্যালেন্ডার, ঈদ কার্ড, ইত্যাদির কোটি টাকার কাজ সিন্ডিকেটের সদস্য কথিত দুই সাংবাদিকই এতোদিন করে আসছেন। বিনিময়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের পোষ্টিং ও প্রমোশনের জন্য সুনাম সুচক প্রতিবেদন প্রকাশ আর সিন্ডিকেটের বাইরের অফিসারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্ক্যান্ডাল নিয়ে তাদের পত্রিকায় বিশেষ প্রতিবেদন ছাপিয়ে আসছিলেন।
স্বৈরাচারের পতনের পর বিভিন্ন মিশনে সৃষ্ট শূন্যতার প্রেক্ষাপটে এই দুই হলুদ সাংবাদিককে এখন প্রেস-অ্যাটাশে হিসেবে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের টোপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এজন্য তাদেরকে নতুন এসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে-সিন্ডিকেট বিরোধী অফিসারদের চরিত্র হননমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে; যাতে মিথ্যা প্রতিবেদন হলেও সোশ্যাল মিডিয়ার ভয়ে কর্তৃপক্ষ এইসব অফিসারের পোষ্টিং পদোন্নতিতে দ্বিধান্বিত হোন। দুই ভাড়াটিয়া সাংবাদিক এ-কাজে ইতোমধ্যেই কয়েকজনের নামে নিজেদের পত্রিকায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা রিপোর্ট ছাপিয়ে দিয়েছে। জানা গেছে তাদের এই চরিত্র হননের তালিকায় আরও বেশ কয়েকজন মেধাবী অফিসার রয়েছেন, যাদের বিরুদ্বে পর্যায়ক্রমে প্রতিবেদন ছাপানো হবে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ইতোমধ্যেই মন্ত্রনালয়ের অফিসারদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। সিন্ডিকেট বিরোধী সাধারণ অফিসারদের বক্তব্য পরিস্কার-যদি মন্ত্রনালয় কোনো অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে অথবা কোনো সংস্থা যেমন দুদক কর্তৃক কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলে, তাহলে তারা যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়াকে সমর্থন করবে। যেমন দুদক কর্তৃক বর্তমান চলমান একটি দুর্নীতির তদন্তের প্রতি তারা পূর্ণ সহায়তার ঘোষণা দেন।
তাঁরা বলেন, সিন্ডিকেটবাজীর শিকার হয়ে কেউ সামাজিকভাবে এইসব হলুদ সাংবাদিক দ্বারা হেয় প্রতিপন্ন হলে তা মন্ত্রনালয়ের অফিসাররা মেনে নেবেন না। তাঁরা অবিলম্বে এই দুই ভাড়াটিয়া সাংবাদিককে মন্ত্রনালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পাশাপাশি তাদের গুরু, সিন্ডিকেটের বর্তমান কর্ণধার, সদ্য মন্ত্রনালয়ে আগত গত সরকারের এবং প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট একজন অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এই স্বৈরাচারী সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত এই অফিসারের বিবিধ কার্য্যকলাপ নিয়ে সম্প্রতি জনপ্রিয় সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট বের করেছেন। সাধারণ অফিসাররা আশা করছেন, কর্তৃপক্ষ এটি আমলে নিয়ে অতি দ্রুত তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
প্রকাশ থাকে যে, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনে স্বৈরাচারের দোসর এ ধরণের অফিসারদের চাকুরী থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রনায়ে তারা ভোল পাল্টিয়ে বহাল তবিয়তে অবস্থান করছেন, উপরন্তু গত সরকারের সময় নির্যাতিত অফিসারদের ওপর নতুন করে নিপীড়ন শুরু করেছেন। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রনায়ে এই অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিবসহ স্বৈরাচারের লেস্প্যান্সারদের অনতিবিলম্বে বহিস্কারের দাবী জোরালো হচ্ছে।