চব্বিশ ঘন্টা পরও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রাজধানীর পুরান ঢাকায় স্বর্ণ ছিনতাইকারীরা

চব্বিশ ঘন্টায়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাজারীবাগ সেকশন বেড়ীবাঁধ এলাকায় সত্তুর ভরি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি। এ যেনো তীরে এসে তরী ডুবার প্রবাদ বাক্যটিই সত্যে পরিণত হলো। স্বর্ণ ব্যবসায়ী সজল রাজ বংশী দোকানে থাকলে চুরি-ডাকাতি হওয়ার ভয়ে প্রতিদিনই রাতে দোকানের অলংকার বাড়িতে এনে রাখতেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির কাছ থেকেই ছিনতাইকারীরা তাকে গুলি করে স্বর্ণের ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। বাড়িতে পৌঁছাতে মাত্র মিনিট খানেক সময়ের পথ। বেড়ীবাধ থেকে ঘরের দরজাটাও নজরে আসে। চোখের সামনেই বড় ভাইকে ছিনতাইকারীরা ঘেরাও করে পায়ে গুলি করে সঙ্গে থাকা ৭০ ভরি স্বর্ণ ও চার লাখ টাকা নিয়ে গেলো বলে জানিয়েছেন পুরান ঢাকার হাজারীবাগের সেকশন বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন আজিপুরা জেলে পাড়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী সজল রাজ বংশীর ছোট ভাই জয় রাজ বংশী ও তার স্ত্রী লতা রাজ বংশী।

লতা রাজ বংশী জানান, রাত আনুমানিক এগারোটায় আমি আমার স্বামী জয় রাজ বংশী দাওয়াতে যেতে ঘর থেকে বের হয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলাম বেড়ীবাঁধে। রাস্তাটির একপাশে ছিলো ভয়াবহ যানজট। আমাদের সামনে দুটি ট্রাকের মাঝের ফাঁকা জায়গায় একটি বাইক তার ডানে বাঁক নিয়ে রাস্তার এপারে আসার মূহুর্তেই ট্রাকের ফাঁকা অংশে দুইপাশ দুটি বাইকে আসা ব্যক্তিরা ব্লক করে দেয় বাইকে থাকা ব্যক্তিকে। রাস্তাটি অন্ধকার থাকা ও বাইকারের মাথায় হেলমেট থাকয় চালককে চেনা যাচ্ছিলো না। বাইক থেকে নেমেই তিন-চারজন ওই বাইক চালককে ঘেরাও করে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগটি টানাটানি করছিলো।মনে হচ্ছিলো পেছন থেকেও একজন বাইকে থাকা লোকটাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে রেখেছিলো। এসময় হঠাৎ করেই কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি। মূহুর্তেই রাস্তার যানজট ক্লিয়ার হয়ে গেলো। বাইকে থাকা লোকটি তার ব্যাগটি দিতে না চাওয়ায় তার পায়ে গুলি করলো একজন। এরপর তার কাছ থেকে ঝাপটা মেরে ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে সামনে অপেক্ষামান স্ট্রার্টে থাকা বাইকে উঠে চলে গেলো ওরা। আর পুরো ঘটনাটি ঘটে মাত্র মিনিটের কম সময়ের মধ্যে। আর আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ কাঁতরানো ব্যক্তিই যে আমার ভাসুর তা তখনই আমরা চিনতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বামী জয় রাজ বংশী এগিয়ে যায় তাকে উদ্ধারে। আমিও চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে থাকি। ততক্ষণে ছিনতাইকারীদের বাইকের বহরটি বেড়ীবাঁধ দিয়ে গাবতলির দিকে চলে যায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জয় রাজ বংশী বলেন, আমারা কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। কামরাঙ্গীচর রনি মার্কেটের বিপরীতে আমার ভাইয়ের ইতি জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। তিনি এখানে ১৫/১৬ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছে। আমারও সুমন কমিউনিটি সেন্টারের পাশে একটি দোকান রয়েছে। গত ৫ আগষ্টের পর থেকেই নিরাপত্তার জন্য আমরা দোকান থেকে স্বর্ণগুলো বাড়িতে এনে রাখতাম। কিন্তু বাড়িতে আনার পথে আজ বাড়ির নিকট থেকেই স্বর্নগুলো ছিনতাই হয়ে গেলো। ঘটনার সময় পুরো রাস্তাজুড়ে জ্যাম থাকলেও গুলির পরই রাস্তাটি ফাঁকা হয়ে যায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার প্রায় দুই ঘন্টা আগে থেকেই কয়েকজন তরুণ এখানে চায়ের দোকানে আড্ডা ও পায়চারি করছিলো। তাদের বাইকের কোন নাম্বার প্লেট ছিলো। ঘটনার পর পরই আহত সজল রাজ বংশীকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছিনতাইয়ের ঘটনায় শুক্রবার কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

কামরাঙ্গীচর থানার ওসি আমিরুল ইসলাম জানান, অপরাধীদের আটকে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তবে গত চব্বিশ ঘণ্টায় পুলিশ কাউকে সনাক্ত ও আটক করতে পারেনি।

আরও পড়ুন