দুই সহোদর আতঙ্কে কক্সবাজার শহর! ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা

তায়েফ আহমেদ। পদপদবী নেই এরপরেও শহর ছাত্রলীগ নেতা! তার ভাই তাইসাদ সাব্বির। শহর ছাত্রদল নেতা। কক্সবাজার শহরের নুরপাড়া বসবাস করলেও তাদের আদিনিবাস সাতকানিয়া। তারা এখন পর্যটন শহরে আতংকের নাম। এসব অপরাধ ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কিশোর গ্যাং তৈরী করে শহরের পাড়া-মহল্লায় ত্রাস সৃষ্টি করে চলেছে। গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল এমনকি খুন-খারাবির সাথে জড়িয়ে পড়েছে। অপরাধ জগতে এসব কিশোররা এখন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। তারা বেপরোয়া এবং নিজের হিরোইজম দেখানোর জন্য যেকোনো অপরাধ করতে দ্বিধা করে না। তাদের এই বেপরোয়া আচরণকে ইন্ধন বা নতুন অস্ত্র হিসেবে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা। তাদের নানা অপকর্মের সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কিশোর গ্যাং তৈরী করে অপরাধে জড়াচ্ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতে তারা ব্যবহার করছে অবৈধ অস্ত্র। পর্যটন শহরে তায়েফ, তাইসাদ নেতৃত্বে সশস্ত্র কিশোররা কথিত ছাত্রলীগ কর্মী জিসানের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে নিজেদের অবৈধ অস্ত্রের দাপটে ক্ষমতা দেখাতে উৎসাহী হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ।

অভিযোগে প্রকাশ, কক্সবাজার শহরের বদর মোকাম এলাকায় জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টা, নিজের অনুগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফাঁকা গুলিবর্ষণসহ নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন নব্য ছাত্রলীগের কথিত নেতা তায়েফ আহম্মেদের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। তারা ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে জনমনে আতংক সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে সমালোচনা থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না।

২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮ টার দিকে সশস্ত্র তায়েফের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী কস্তুরাঘাট এলাকায় স্থানীয় শাহাদাত হোসেনের মালিকানাধীন রেজিস্ট্রার জমি দখল নিতে টিনের ঘেরা কেটে ফেলে ভাংচুর করে। টিনের ঘরটিও ভেঙে নিয়ে যায়। এসময় ১ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয় বলে ভুক্তভোগীর দাবি। এসময় সন্ত্রাসীরা ৫/৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সশস্ত্র সন্ত্রাসী তায়েফ আহম্মেদ ও তায়সাদ সাব্বিরের নেতৃত্বে খায়রুল ইসলাম জিসান, ইকবাল হাসান প্রকাশ রুবেল, টিপু, মনির আহম্মেদ, সাজ্জাদ হোসেন, আসাদুজ্জামান সায়েম, ইমতিয়াজ আমির শুভ সহ ১০/১২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে দেখেছেন। রাত সাড়ে ৮ টার খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি অপারেশন মো. সেলিম উদ্দিন জানান, ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে জনমনে আতংক সৃষ্টির অভিযোগ পেয়ে কস্তুরাঘাট এলাকায় পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। পুলিশ দল ঘটনাস্থল পরিশর্দন করেছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওয়া আনা হবে।

এর আগে এই জিসান, তায়েফ, তায়সাদ, টিপু, ইকবাল নেতৃত্ব প্যারাবন কেটে জমি দখলের চেস্টার ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাও দায়ের করেছিলেন। মামলা দায়ের পর প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন ভুক্তভোগী অনেকেই। বেরিয়ে আসছে নব্য কথিত ছাত্রলীগ নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের নানান তথ্য।

শহরের বদর মোকাম এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে জানান, এক দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে জমি দখল, চাঁদাবাজি করতে তায়েফ ও তার ভাই তায়ছাদের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভাড়া খাটেন। তারা সব সময় ভাড়াটে হিসেবে বাসাবাড়ি কিংবা অন্যের জমি দখলবাজি ও চাঁদাবাজি করে আসছে। তারা শুধু জমি দখল নয়, ইয়াবা ব্যবসাও তাদের হাতে। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর বেশ কিছু সশস্ত্র সদস্য ইতোপূর্বে ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেল খেটেছে। এই বাহিনী ভাড়া যাওয়া, শহরে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্র ব্যবসা, ইয়াবা ব্যবসাসহ এমন কোন অপরাধ নেই তারা করছে না।

সচেতন মহলের মতে, গত কয়েক বছর ধরে পর্যটন শহরের বিভিন্ন স্থানে ‘কিশোর গ্যাং’ কালচার অনেকটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। প্রচলিত এবং পরিচিত আন্ডার ওয়ার্ল্ড এবং এর সঙ্গে জড়িত গডফাদার ও সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানান।

আরও পড়ুন