দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিষফোঁড়া শাহ আমানত তৃতীয় সেতুর টোলপ্লাজা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ শাহ আমানত তৃতীয় সেতুর টোলপ্লাজা এখন যেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। টোল আদায়ের ধীরগতি, অব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন অবৈধ যানবাহনের চাপে এই সেতুতে প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণ যাত্রী থেকে ব্যবসায়ী—সবারই অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিনই বিশেষ করে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার যানজট ভয়াবহ রূপ নেয়। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয় অ্যাম্বুলেন্স সহ যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকে।

চট্টগ্রাম-পটিয়া রুটের মিনিবাসের চালকের সহকারী মোহাম্মদ আলম বলেন, “প্রায় প্রতিদিনই সকাল-বিকেল টোলপ্লাজার সামনে তীব্র জট তৈরি হয়। টোল আদায়কারী ছয়টি লেন চালু থাকলেও, ধীরগতির কারণে গতি কমে যায়। সেতুর দুই প্রান্তেই এমনিতেই জ্যাম লেগে থাকে, তার উপর টোল আদায়ের সময়ও বাড়তি বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়।”

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের এস আলম বাস সার্ভিসের চালক সিরাজ মিয়া বলেন,”টোল আদায় দ্রুত করা গেলে এই জট অনেকটাই কমে যেত। কিন্তু কর্তৃপক্ষের টোল আদায়ের অব্যবস্থাপনা আর ধীরগতি আমাদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে চলাচলকারী ব্যবসায়ী সোহেল মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, “কর্ণফুলী সেতুর চেয়ে মেঘনা-গোমতী বা যমুনা সেতু দিয়ে অনেক বেশি গাড়ি চলে, কিন্তু ওখানে টোল আদায় অনেক দ্রুত হয়। শাহ আমানত সেতুতে টোল আদায় ধীরগতির পাশাপাশি নতুন স্টাফ দিয়ে কাজ করানো হয়। সেই সঙ্গে যত্রতত্র পার্কিং আর ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার কারণে জ্যাম বেড়ে যাচ্ছে।”
অটোরিকশা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির আধিক্যে ট্রাফিক বিভাগের অভিযোগ, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের আধিক্যও যানজট বাড়াচ্ছে।

কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা এলাকার জনপ্রতিনিধি আবদুন নুর বলেন, “টোলপ্লাজায় যানজট কমাতে অন্তত আরও চারটি লেন বাড়ানো দরকার। সেই সঙ্গে ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির শৈথিল্যের কারণেই অটোরিকশার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।”

যানজটমুক্ত নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য শাহ আমানত সেতুর টোলপ্লাজা ইতোমধ্যে ৬-৮ লেনে উন্নীত করা হলেও সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। সওজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মইজ্জ্যারটেক টোলপ্লাজার দুই পাশে ১২ ফুট রাস্তা সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত ভোগান্তি যে কমবে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত সবাই।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, “কালুরঘাট সেতু বন্ধ থাকায় সব গাড়ির চাপ শাহ আমানত সেতুতে এসে পড়ছে। দ্রুত নতুন সেতু ও বিকল্প পথের ব্যবস্থা না করা হলে যানজটের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়বে।”

স্থানীয় সংবাদকর্মী মহি উদ্দিন বলেন, “শাহ আমানত সেতুর যানজটের প্রধান কারণ হলো অটোরিকশার আধিক্য, চালকদের শৃঙ্খলা না মানা এবং অতিরিক্ত গাড়ির চাপ। অনেক গাড়ির নম্বর প্লেট ঢেকে রাখা হয়। প্রভাবশালীরা টোল দিতে চান না আর চালকদের বড় টাকা দেওয়ায় সময় নষ্ট হয়। সন্ধ্যায় কারখানার ছুটির সময় এবং ছুটির দিনে বিনোদনপ্রেমীদের কারণে চাপ আরও বেড়ে যায়। ছোট গাড়ির সংখ্যা বেশি হওয়ায় টোলপ্লাজার লেনগুলোতে বাড়তি ভিড় হয়। যদিও টোল আদায়কারীরা সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তবুও ধীরগতির কারণে যানজট কমছে না।

মইজ্জ্যারটেক এলাকার ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) আবু সাঈদ বাকার বলেন, “সম্প্রতি এই রুটে যানবাহনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে। নতুন করে ট্রাফিক পুলিশ বক্স নির্মাণের কাজ চলছে। তবুও গাড়ির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”

টোলপ্লাজার ইজারাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কোম্পানি সেল-ভ্যান জেভি’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন ঘোষ বলেন, “বর্তমানে শাহ আমানত সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৭ হাজারেরও বেশি গাড়ি চলাচল করছে। যদিও ৮টি লেন দিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে, কিন্তু বিশেষ ছুটির দিনে চাপ বেড়ে যায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ইতোমধ্যে দু’পাশে রাস্তা বর্ধিতকরণের পরিকল্পনা নিয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং কাজ শিগগিরই শুরু হবে।”

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকার সংযোগ স্থাপনকারী এই সেতুর যানজট দ্রুত নিরসন না হলে অর্থনীতি ও পর্যটনখাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শিরোনামটা একটু চেঞ্জ করে দিয়েন

আরও পড়ুন