বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র খোকনসহ ৩জন গুলিবিদ্ধের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
ফেনী নদী থেকে বালু তোলাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলায় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র ও বারইয়ারহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম খোকনসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধের ঘটনায় ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলায় ফেনী সদর উপজেলার ১২ নং ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক রিপনকে প্রধান আসামী করে ১২ জনের নাম উল্লেখপূর্বক এবং অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামী করে মামলা করেন বারইয়ারহাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম খোকনের বালু উত্তোলন কার্যক্রম দেখভালে নিয়োজিত মিজানুর রহমান রিয়াদ।
শনিবার সকালে মামলা দায়েরের পর দুপুর সাড়ে ১২ টায় মামলার ৮ নং আসামী শাকিল (২৮) ও সামছুল হক বাচ্ছুর ছেলে নুর আলম (৩০)কে গ্রেপ্তার করে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ।
শাকিল সোনাগাজী উপজেলার ৮ নং আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সোনাপুর বাদামতলী এলাকার মিন্টুর পুত্র।
মামলার আসামিরা হলেন ফেনী সদর উপজেলার ১২ নং ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মুজিবুল হক রিপন, ফেনী সদর উপজেলার পূর্ব ফাজিলপুর গ্রামের খায়ের আহমদের ছেলে বেলাল প্রকাশ কিলার বেলাল, ফাজিলপুর গ্রামের মেশকাত প্রকাশ শ্যুটার মেশকাত, সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের মানিকের ছেলে সাইদুল, সোনাপুর বাদামতলী গ্রামের সামছুল হক বাচ্ছুর ছেলে নুর হোসেন হোনা মিয়া, ফাজিলপুরের কলাতলী গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে পলাশ প্রকাশ ডিস পলাশ, নৈরাজপুর গ্রামের রিজেল প্রকাশ শ্যুটার রিজেল, সোনাপুর বাদামতলী গ্রামের মিন্টুর ছেলে শাকিল, পূবালী গ্রামের সেলিমের ছেলে রাহুল, নৈরাদপুর গ্রামের মিজানের ছেলে মাসুদ উদ্দিন, ফাজিলপুর পূবালী গ্রামের নুরুল করিমের ছেলে মোহসিন অপু ও একই গ্রামের মঞ্জুরুল করিম রিদান এবং অজ্ঞাত ৮-১০ জন।
মামলার বাদী মিজানুর রহমান রিয়াদ বলেন, করেরহাট ইউনিয়নে পাওয়ার গ্রিড উপকেন্দ্র বালি ভরাটের কাজ চলছিল। বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকনের নির্দেশে আমি শ্রমিক নিয়ে ফেনী নদী থেকে বালি উত্তোলন করে পাওয়ার গ্রিড উপকেন্দ্রের বালি সরবরাহ করে আসছিলাম। আমরা মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার আওতাধীন ফেনী নদী থেকে বালি উত্তোলন করলেও অন্যায়ভাবে ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপনের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধচক্র বালি উত্তোলন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাছে চাঁদা দাবী করতো এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি প্রদান করে আসছিল। এমন পরিস্থতিতে বিষয়টি আমি মেয়রকে অবহিত করলে পাওয়ার গ্রিড উপকেন্দ্রের ভরাট কাজে যাতে কোন ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে শুক্রবার সকালে মেয়রসহ ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে বালি উত্তোলন কাজ পরিদর্শনে যাওয়ার সময় সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের ফেনী নদী সংলগ্ন পাড়ের কাছে পৌঁছলে বেলাল প্রকাশ কিলার বেলালের নেতৃত্বে একটি শসস্ত্র দল ট্রলারযোগে এসে মেয়র ও আমাদের লক্ষ্য করে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করলে মেয়র রেজাউল করিম খোকন, অশোক সেন ও সাঈদ খাঁন দুখু গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় মেয়র রেজাউল করিম খোকনের মোবাইলসহ আমাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ হোসেন বলেন, শনিবার সকালে ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপনকে প্রধান আসামী করে ২২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন মিজানুর রহমান রিয়াদ নামের এক ব্যক্তি। মামলা দায়েরের পর শাকিল ও নুর আলম নামে দুই জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, মিরসরাই উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন জয়পুর পূর্ব জোয়ার এলাকায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেডের বাস্তবায়নে এবং বিশ্ব ব্যাংক, বাংলাদেশ সরকার ও পিজিসিবি’র অর্থায়নে পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন এবং ক্ষমতাবর্ধন (ইএসপিএনইআর) প্রকল্পের নির্ধারিত স্থান বালু দিয়ে ভরাটের কাজ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৫ একর জায়গার উপর নির্মানাধীন করেরহাট ৪০০/২৩০/১৩২ কেভি জিআইএস গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন। গ্রিড উপকেন্দ্রের বালু সরবরাহ করা হচ্ছিল ফেনী নদীর কলমিরচর এলাকার ফতেহপুর, বাঁশখালী ও আজমপুর মৌজা এলাকা থেকে। শুক্রবার সকালে ফেনী নদীর কলমিরচর এলাকায় বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকনসহ ৮ জন নৌকাযোগে বালু উত্তোলন কাজ পরিদর্শনে যান।
এ সময় ফেনীর ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপনের লোকজন কোনকিছু বুঝে উঠার আগে গুলিবর্ষণ করলে গুলিবিদ্ধ হন মেয়র রেজাউল করিম খোকন (৫০), হিঙ্গুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক অশোক সেন (৪২) যুবলীগ কর্মী সাইদ খাঁন দুখু (৩৫)। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়র রেজাউল করিম খোকন ও অশোক সেন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপর জন সাঈদ খান দুখু চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন।