আলোচিত বাঁশখালীর চাম্বল ইউপির শঙ্কার নির্বাচন কাল, ঝুঁকিপূর্ণ ৪ কেন্দ্র

দেশজুড়ে বহুল আলোচিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের শঙ্কার নির্বাচন আগামীকাল (১২ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত সোমবার মধ্য রাত থেকে সবধরণের প্রচার প্রচারণা বন্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা নির্বাচন অফিস। নবম ধাপে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ১৫ জুন ভোট হওয়ার কথা ছিল। ভোটের প্রচারণায় ইভিএম নিয়ে নৌকার প্রার্থীর বেফাঁস মন্তব্যে বন্ধ হয়ে যায় ভোট। এরপর গত ১৪ জুলাই নতুন করে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করলেও তাও বিচার বিভাগের রায়ে বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে একে একে ৩ বার নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন হচ্ছে আগামীকাল। নানা ক্লান্তি ও অনিশ্চিয়তা শেষে প্রার্থীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন ১২ অক্টোবর নির্বাচন হচ্ছে।

নির্বাচনকে ঘিরে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার শেষ নেই প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। বিশেষ করে এ ইউপি’র ২ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম চাম্বল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭ নম্বর ওয়ার্ড চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়, ৮ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর চাম্বল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব চাম্বল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র অতীব ঝুঁকিপুর্ন বলে জানান সাধারণ ভোটাররা। বিগত পরপর দু’টি নির্বাচনে এসব কেন্দ্রে ভোট সুষ্টু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় জানায়, সারাদেশের ন্যায় নবম ধাপের তফসিল অনুযায়ী চাম্বল ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটাররা প্রথমবারের মতো ইভিএম ভোট দিতে যাবে এ ইউপির নির্বাচনে। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ইভিএম পৌঁছেছে। আজ থেকে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যাবে ইভিএম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ৫৯০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৮শত ৫২ জন, মহিলা ভোটার ১১ হাজার ৭শত ৩৮ জন। মোট ১০ টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ৪ জন। তাদের মধ্যে মুজিবুল হক চৌধুরী (নৌকা), ফজল কাদের চৌধুরী (আনারস), সাহেদা বেগম নুরী (চশমা), এরশাদুর রহমান (মোটরসাইকেল) প্রতিকে নির্বাচন করছেন। এছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ৪১ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন।

সম্প্রতি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ফজল কাদের চৌধুরী সুষ্ঠ, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার নেতা-কর্মীদের নানাভাবে হুমকী-ধমকি দেওয়া সহ ঝুকিঁপূর্ণ চিহ্নিত কেন্দ্রে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদারের দাবী জানান নির্বাচন সংশ্লীষ্ট কতৃপক্ষের কাছে।

এদিকে এ নির্বাচনকে ঘিরে এলাকাজুড়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। অপরদিকে সমর্থকদের ওপর হামলা, ভয়ভীতি ও বিভিন্ন অভিযোগের পরেও মাঠে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন বিদ্রোহী প্রার্থী ফজল কাদের চৌধুরী। এতে করেও দিনরাত ভোটের মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী, আনারস প্রতিকে বিদ্রোহী প্রার্থী ফজল কাদের চৌধুরী, অন্যদিকে ভোটের লড়াই থাকলেও মাঠে লড়াইয়ে নাই অন্য দুই প্রার্থী সাহেদা বেগম নুরী (চশমা প্রতিক) ও এরশাদুর রহমান (মোটরসাইকেল প্রতিক)। অন্যদিকে সাহেদা বেগম নুরী নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হকের স্ত্রী। এতে ভোটাররাও স্বামী স্ত্রীর লড়াই দারুণ উপভোগ করছেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন মোল্লা বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১০ জন পুলিশ, ১৩ জন আনসার সহ বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যদের সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।’

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি, র‌্যাব টহলের পাশাপাশি একজন ওসির নেতৃত্বে মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে।শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে যেসব পদক্ষেপ দরকার সবই নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত কেন্দ্রগুলোকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হবে। জনগণ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারে তার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসন থাকবে শক্ত অবস্থানে।’

আরও পড়ুন