বন্যায় দূর্গত কৃষকদের জন্য ২৫ শতক জমিতে ধানের বীজ বপন করলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বার

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় মিরসরাই উপজেলায়। বলা চলে সে ক্ষতিতে কৃষকদের হাত মাথায় উঠেছে। জলের বানে ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা। কৃষকদের এরূপ দুশ্চিন্তায় পাশে দাঁড়ালেন দুর্বার’র সদস্যরা। “দুর্যোগে ঐক্য গড়ি, কৃষিতে স্বপ্ন বুনি” এই স্লোগানে নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে মিঠানালা ইউনিয়নে ২৫ শতক জমিতে তৈরী করেন বীজতলা। জমি চাষ থেকে শুরু করে, পানি সেচ ও জমির আলও করেন তারা। এরপর নামেন প্রতি আলে ধানের বীজ ছিটাতে। সেটাও করেন। দেখে মনে হচ্ছে তারা কৃষি বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাদের এ বপনকৃত ধান বীজ থেকে উৎপাদিত ধানের চারা কৃষকরা ৫ একর জমিতে লাগাতে পারবেন। তারা বিআর-২২ জাতের ষাট কেজি ধানের বীজ বপন করেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে এ ধানের চারাগুলো বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। সমাজ উন্নয়ন সংস্থা দুর্বার প্রগতি সংগঠন ও কৃষি উন্নয়ন সংগঠন পত্র-পল্লব যৌথভাবে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, দুর্বার সদস্য ও কৃষকবৃন্দ। এই উদ্যোগের অর্থায়নে ছিলেন আমেরিকান প্রবাসী আবু জাহেদ। দূর্যোগকালীন সময়ে দুর্বারদের এ সকল নিরবিচ্ছিন্ন সাহসিক ও মানবিক কার্যক্রম দেশ গড়ার কাজে তরুণদের উৎসাহী করবে- এ প্রত্যাশা সবার।

সংগঠনের সভাপতি রিপন কুমার দাশ বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাঝে আমরা আগাম শীতকালিন সবজি বীজ বিতরণ করবো। যাতে কৃষকদের ক্ষতি কিছুটা লাঘব হয়।’

সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘৫০ জন দুর্বার স্বেচ্ছাসেবী টানা ১০ দিন এ বিশাল কর্মযজ্ঞে স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন এবং সংগঠনের সদস্য, পৃষ্ঠপোষক ও শুভাকাঙ্খীগণ আর্থিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’

পুরো এ উদ্যোগ তত্ত্বাবধান করেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে রুবেল চক্রবর্তী, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তারেক আহমেদ। বীজ বপন কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘কৃষি ও কৃষকদের কল্যাণে দুর্বার’র এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ আমন চাষী কিছুটা হলেও উপকৃত হবে তাদের এ উদ্যোগ থেকে।’

দুর্বার’র এ কৃষি উদ্যোগ দেখতে আসেন মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন। এসময় তিনি বলেন, ‘এবারের বন্যায় আমাদের কৃষিতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। কৃষকদের আমন ধানের বীজ তলা নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্বার’র নিজস্ব উদ্যোগে কৃষকদের বিন্যামূল্যে ধানা চারা বিতরণ আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সামান্য হলেও অবদান রাখবে।’

উল্লেখ্য, এছাড়া গত ২১ আগস্ট থেকে বন্যায় মিরসরাইতে ফেনী নদীর পানি বাড়তে থাকলে পানিবন্ধী হয়ে পড়ে শত শত মানুষ। চারদিকে যখন বাড়ছে পানির স্রোত। বাঁচার আকুতিতে যখন ভারি হয়ে উঠছে আকাশ-বাতাস। একে অপরের সাথে যখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আর দেরি না করে দুর্বার রেসকিউ টিম ২২, ২৩ ও ২৪ আগস্ট চারটি উদ্ধারকারী বোট ও পিকাপ নিয়ে ছুটে যান ফেনীর নিজকুঞ্জরা পিএইচপি কারখানার সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে ও মিরসরাইয়ের শান্তিরহাট, গোলকেরহাট, নাহেরপুর, ওসমানপুর, আবুরহাট, কাজীগ্রাম, লুদ্দাখালী, এছাক ড্রাইভারহাট ও ঝুলনপোল এলাকায়। স্রোতের তীব্রতা ও গলা পানি উপেক্ষা করে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে তিন দিন, রাত ৩ টা পর্যন্ত প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে প্রায় দুই শতাধিক পানিবন্ধী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেন দুর্বার স্বেচ্ছাসেবীরা। মিরসরাইয়ের মিঠানালা, কাটাছড়া, ওসমানপুর, দুর্গাপুর, ধুম, মঘাদিয়া ও ইছাখালী ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষ ও দুর্গত এলাকায় পানিবন্ধী প্রায় ৫ হাজার জনের মাঝে রাত ও দুপুরের খাবার, শুকনে ও ভারি খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্যালাইন ও ঔষুধ বিতরণ করে দুর্বার।

 

আরও পড়ুন