চট্টগ্রামের পটিয়ায় একটি কওমি মাদরাসার অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে ছাত্রদের মধ্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা মাদরাসা থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বেলা ২ টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ব্যারিকেড তুলে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। রোববার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১০ টার দিকে পটিয়া পৌরসভার আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটেছে।পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রামের অন্যতম বড় কওমি মাদরাসাটির পরিচালনা ও কতৃর্ত্ব নিয়ে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। বিবাদমান দু’পক্ষে গত তিন মাসেরও বেশিসময় ধরে এ বিরোধ চলে আসছে। গত শনিবার বিকালে হেফাজত ইসলাম আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবু নগরী ও হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা খলিল আহমদ কাসেমী উপজেলার জিরি এলাকায় শিল্পপতি মীর আহমদ সওদাগরের ইন্তেকালে তার নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।
এতে আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবু নগরী ইমামতি করেন। রাত ৮টায় আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবু নগরী ও আল্লামা খলিল আহমদ কাসেমী পটিয়া মাদরাসায় মুরুব্বীদের কবর জেয়ারত করতে আসেন। এ খবর পেয়ে মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযার লোকজন মাদরাসায় ঢুকার চেষ্টা করে। পরে রাত ১২ টায় পটিয়া থানার পুলিশ নিয়ে কিছু সন্ত্রাসী মাদরাসায় ঢুকে জোরপূর্বক ঢুকে মুহিবুল্লাহ বাবু নগরী ও খলিল আহমদ কাসেমীকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালায় এবং নাজেহাল করে। নিরাপত্তার কারণে উক্ত দুই আলেম গতকাল রবিবার সকালে মাদ্রাসা থেকে ফিরে যান।এরপর থেকে মাদরাসায় উত্তেজনা চলে আসছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল ১০ টার দিকে মাদরাসার ভেতরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় কয়েকজন ছাত্রকে বেধড়ক পেটানো হয়। এর মধ্যেই শত শত ছাত্র মাদরাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তারা খন্ড খন্ড হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া পৌরসভার ডাকবাংলো মোড় থেকে পটিয়া থানার মোড় পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। কিছু ছাত্র মাদরাসা সংলগ্ন চট্টগ্রাম-দোহাজারি রেললাইনের ওপর অবস্থান নেয়। ৫ ঘন্টা পর বিকাল ৩টায় ব্যারিকেড তুলে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ব্যারিকেড চলাকালে পটিয়া পৌরসভার মহাসড়ক এলাকায় কোনো দূরপাল্লার যানবাহন চলেনি। দোকানপাট বন্ধ ছিল। পটিয়া বাইপাস দিয়ে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো চলাচল করে। ব্যারিকেড চলাকালে জামিয়া মাদরাসার ছাত্ররা মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযাকে লোভী, প্রতারক, সন্ত্রাসী, জালিম বলে শ্লোগান দেয়। মাদরাসায় ঢুকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের হামলার প্রতিবাদ করে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সৃষ্টি করার জন্য মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। এছাড়া সকালে মাদ্রাসার ছাদ থেকে ভাঙ্গা ইট নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। অপরদিকে, অপরপক্ষ মাদরাসা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, মাদরাসার বাইরে ছাত্রদের লাঠি, লোহার রড, গুলতি ও গাছের বাটাম নিয়ে প্রতিপক্ষকে তাড়া করতে দেখা যায়।
সকাল ১০ টায় ওবাইদুল্লাহ হামযার নিয়োজিত একটি সন্ত্রাসী বাহিনী জোরপূর্বক মাদরাসায় ঢুকে হাতে থাকা কিরিচ সহ বিভিন্ন দেশী অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে ছাত্রদের আক্রমণ করে। এতে খালেদ (২০), আরত (২২), আজাদ (২২), তানজিদ (২০), আবদুল্লাহ (২০), আতাউর রহমান (১৯), এমরান (২৪), আরফ (২৩), রিয়াদ (২০), তালহা (১৬) সহ প্রায় ৩০ জন ছাত্র আহত হয়। মাদ্রাসায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে এবং ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পটিয়া থানার ওসি জসিম উদ্দীন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করে। ওবাইদুল্লাহ হামযার বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনীর আক্রমনের প্রতিবাদে মাদরাসার ছাত্ররা সকাল ১০ টায় প্রথমে পটিয়া ডাকবাংলোর সামনে ও দুপুর ১২ টায় পটিয়া থানার সামনে রাস্তার উপর বসে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। এছাড়া মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের প্রতি জোর দাবি জানায়।
এদিকে বিকাল ৫টায় মাদ্রাসা হলরুমে মাদ্রাসা সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে সভাপতি আনোয়ার হোসেন রব্বানী এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বিজাতীয় সংস্কৃতি চালু, মজলিশে সূরার কমিটির সভা না ডাকা মুহাদ্দিসদের অপমান করা, আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগে গত ২৮ অক্টোবর ছাত্র আন্দোলনের মুখে মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে এবং তাকে সূরা কমিটি অব্যাহতি দেয়। গত ৩ মাস ধরে মাদ্রাসায় প্রবেশ করতে ওবাইদুল্লাহ হামযা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। যার কারণে মাদ্রাসার ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন শাইখুল হাদিস মুফতী আল্লামা আহমদ উল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুর রহমান, নুরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা মঞ্জুরুল কাদের চৌধুরী, দিল মোহাম্মদ, নুরুল আলম চৌধুরী প্রমুখ। অপরপক্ষ আতরাফে জামেয়ার প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা বেলাল উদ্দিন জানান, ‘একটি পক্ষ মাদ্রাসাকে জিম্মি করে রেখেছে। দূর্নতিপরায়ন একটি সিন্ডিকেট তাদের প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর মাদ্রাসার মহাপরিচালক ওবায়দুল্লাহ হামযাকে নির্মমভাবে হেনস্তা করার মধ্য দিয়ে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরপর থেকে এ সিন্ডিকেঁটি ঐতিহ্যের এি দ্বীনি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য পায়তারা করে যাচ্ছে। গত শনিবার তারই ধারাবাহিকবতায় একটি অবৈধ শুরার ডাকার খবর পেয়ে আমরা মাদ্রাসায় গেলে মাদ্রাসার ভেতওে থাকো সন্ত্রাসী অতর্কিতভাবে আমাদের উপর বৃষ্ঠির মত ইঁপাঠকেল ছুটতে থাকে। তারা মাদ্রাসাকে মিনি ক্যন্টনমেন্টে পরিনত করেছে।’
চট্টগ্রামের পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাদরাসার ভেতরে সমস্যা। কিন্তু ছাত্ররা বেরিয়ে মহাসড়কের আশপাশে অবস্থান নেয়। এতে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল ঘণ্টাখানেকের মতো বন্ধ ছিল। পরে স্বাভাবিক হয়েছে। ছাত্ররা মাদরাসায় ফিরে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মাদরাসা ও এর আশপাশে অবস্থান নিয়েছে।