যেনো ক্রোধের অনলে পুড়লো রাউজানের হৃদয়
মুরগির খামারে ঝগড়া ও বাকবিতন্ডার জেরে শিবলী সাদিক হৃদয়কে শায়েস্তা করতে অপহরণ করে। অপহরণের পর শাস্তি দিতেই তাকে হত্যা করে সারা শরীর টুকরো টুকরো করা হয়। পরে শরীরের টুকরো অংশগুলো পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়। এভাবেই হত্যাকান্ডের ঘটনা আদালতে বর্ণনা করেন উপজাতি দুই আসামি। চট্টগ্রামের রাউজানে স্কুল শিক্ষার্থী ও একটি মুরগির খামারের দায়িত্বে থাকা শিবলী সাদিক (১৯) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। খুন হওয়া শিবলী সাদিক নিহত রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের মুহাম্মদ শফির ছেলে। তার বাবা পেশায় পিকআপ ভ্যানের চালক। শফির দুই ছেলের মধ্যে বড় শিবলী সাদিক হৃদয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া ওই দুই আসামি হলেন সুইচিংমং মারমা (২৪) ও অংথুইমং মারমা (২৫)। আসামি সুইচিংমং মারমা রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বড়ইছড়ির বাসিন্দা এবং অংথুইমং মারমা রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বাসিন্দা।
চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতের বিচারক শাহরিয়ার ইকবাল সুইচিংমংয়ের এবং ষষ্ঠ আদালতের বিচারক নুরুল হারুন অংথুইমংয়ের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
স্বীকারোক্তির বিষয়ে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি আদালতে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, হৃদয়ের সাথে ঝগড়া-বাকবিতন্ডার জেরে শায়েস্তা করতে ২৮ আগস্ট খামারের পেছনের পাহাড়ের প্রায় ৮কি.মি দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। পাহাড়ে তাকে হাত-পা বেঁধে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে তার পরিবারে ফোন করে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।”
ওসি জানান, “অপহরণের একদিন পর অর্থাৎ ২৯ আগস্ট তাকে গলা কেটে হত্যা করে তারা। হত্যার পর শরীর থেকে হাত-পা, মাথা আলাদা করে পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয়। তখনো শিবলী সাদিকের পরিবারে জানতো না তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপরে আসামিরা আবার মুক্তিপণ দাবি করলে তার বাবা বান্দরবানে গিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ তুলে দেন দুই ব্যক্তির হাতে। মুক্তিপণের পরেও তাকে ফেরত পাননি পরিবার। কারণে তাকে আগে হত্যা করা হয়।”
ওসি আরও বলেন, “স্বীকারোক্তিতে দুই আসামি জানান, হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনা করেন উমংচিং মারমা (২৬)।” তারা তিনজনকে গত রোবাবার চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকান্ডে আরও কয়েকজন জড়িত আছে বলে তারা জানান। তাদের দ্রæত গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের রাউজান থেকে অপহরণ হওয়া স্কুল শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক হৃদয়ের (২০) খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয় সোমবার সকালে। অপহরণের ১৩ দিন পর পুলিশ তার খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধারের পর অভিযুক্ত উমংচিং মারমাকে নিয়ে ফেরার পথে উত্তেজিত জনতার রোষানলে পড়ে। তারা ওই যুবককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। গণপিটুনিতে নিহত উমংসিং মারমা রাঙামাটির বেতবুনিয়া ইউনিয়নের রঙ্গিপাড়া গ্রামের উথোয়াইমং মারমার ছেলে।