দোহাজারী চৌকিদারফাঁড়ি সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শনে অতিরিক্ত সচিব ছায়েদুজ্জামান

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভাধীন ‘লালুটিয়া চৌকিদারফাঁড়ি’ ও সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ‘নয়াহাট’ দুইটি পাশাপাশি গ্রাম। কিন্তু গ্রাম দুইটিকে শত শত বছর ধরে বিভাজন করে রেখেছে খরস্রোতা সাঙ্গু নদী। শুধু দোহাজারী পৌরসভা ও পুরানগড় ইউনিয়ন নয় পার্শ্ববর্তী ধোপাছড়ি, বাজালিয়াসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজনদের এ নদী নৌকাযোগে পেরিয়ে এপার-ওপার আসা যাওয়া করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বর্ষাকালে এ দুর্ভোগ আরো চরমে ওঠে যখন খরস্রোতা এ নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদেরকেই সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হয়। তাছাড়া প্রতিবার নৌকাযোগে এ নদী পাড়ি দিতে ইজারাদারদের হাতে নগদ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনেকটা শাখের করাতের মতো।

স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে সাঙ্গু নদীর ওপর চৌকিদারফাঁড়ি-নয়াহাট সেতু নির্মাণ আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে প্রতিটি সরকারের আমলে। শুধুমাত্র দুই থেকে আড়াই’শ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু সাঙ্গু নদীর ওপর নির্মাণ করে দু’পাড়ের সেতুবন্ধন রচনায় কেউ এগিয়ে আসেনি। এপার ওপারের লোকদের স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবদি দুর্ভোগের মাঝেই কাটাতে হচ্ছে। আর এ একটি কারনে দোহাজারী পৌরসভা ও পুরানগড় ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়নগুলোর লোকজনের মাঝে বিভাজনের একটি ধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে এই খরস্রোতা সাঙ্গু নদীর জলরাশির মধ্য দিয়ে। ফলে পূর্বপাড়ের প্রায় ৩০টি গ্রামের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সকলের দুর্ভোগ লেগে থাকে প্রতি বছর।

অবশেষে দোহাজারী পৌরসভার চৌকিদার ফাঁড়ি এলাকায় সাঙ্গু নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) ছায়েদুজ্জামান।
শনিবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় তিনি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন।

এসময় চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন টিমে আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত সচিব ড. অঞ্জন কুমার দেব রায়, সিনিয়র সহকারী প্রধান সুমী মজুমদারসহ অন্যরা। সাঙ্গু নদীর দুই তীর, চৌকিদার ফাঁড়ি ও নয়াহাট এলাকা পরিদর্শনের সময় তাঁরা গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গসহ স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণ করেন। এসময় স্থানীয় শত শত জনগণ তাদের দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশা ও সাঙ্গু নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি তুলে ধরেন।

পরিদর্শনের সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম, এলজিইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল আহমদ, প্রকল্প পরিচালক জিসিপি-৩ আবুল মনজুর মো. সাদেক, এলজিইডি চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী, দোহাজারী পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ লোকমান হাকিম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাফর আলী হিরু, দোহাজারী পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল শুক্কুর, এলজিইডি চন্দনাইশ উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মাদ জুনাইদ আবছার চৌধুরী, উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম, ধোপাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুল আলীম, পুরানগড় ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক সিকদার, উপজেলা কৃষকলীগ সাধারণ সম্পাদক নবাব আলীসহ দোহাজারী পৌরসভার নবনির্বাচিত কাউন্সিলরবৃন্দ।

উল্লেখ্য, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে সাঙ্গু নদীর উপর চৌকিদার ফাঁড়ি-নয়াহাট এলাকায় সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি। দোহাজারী জিসি-লালুটিয়া ভোমাংহাট জিসি সড়কে চেইনেজ ৫৫১০মিটারে সাঙ্গু নদীর ওপর ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে (২২০মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭.৩০মিটার প্রস্থ) পিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণের প্রস্তাব একনেকে পাস হয়ে আসার পর ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এর দুই দিন পর (৯ নভেম্বর’১৮ইং, শুক্রবার) সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল চৌকিদারফাঁড়ি-নয়াহাট এলাকার প্রস্তাবিত সাঙ্গু সেতুর স্থান পরিদর্শন করেন। হাইড্রোলজি ও মরফোলজি টেষ্ট করার জন্য সাঙ্গু নদী থেকে নমুনা মাটিও সংগ্রহ করে নিয়ে যান তাঁরা।

গত ২১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর বক্তব্যে নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি উক্ত সেতু নির্মাণের ব্যাপারে পুনরায় বক্তব্য উপস্থাপন করার পর শনিবার (২২ জুলাই) সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) ছায়েদুজ্জামান।

আরও পড়ুন