বাঁশখালীতে পানীয়জলের তীব্র সংকট

গ্রীষ্মের শুরুতে বছরের সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রায় হাঁফিয়ে উঠেছে জনজীবন। মৌসুমের শুরুতেই চট্টগ্রামের সমগ্র বাঁশখালীতে শুরু হয়েছে পানীয় জলের তীব্র সংকট। নানা কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের তুলনায় স্তরে পানি না জমা অন্যতম। বোরোচাষের জন্য গভীর মোটরপাম্প বসিয়ে পানি উত্তোলন এর ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এছাড়া এর প্রভাব পড়ছে টিউবওয়েলের ওপর। এ কারণে টিউবওয়েল থেকেও মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পাচ্ছে। জমিতে সেচের জন্য মাটির গভীরে যে ডীপকল বসানো হয়েছে তার ফলে সাধারণ নলকূপ দিয়ে পানি উঠানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বৈদ্যুতিক মোটর এবং সাবমার্সিবল পাম্প চালিয়ে গভীর নলকূপের মাধ্যমে অনেক নিচ থেকে পানি তুলে নেওয়ার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে বাঁশখালীতে প্রায় ১১ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। বাঁশখালীর অধিকাংশ এলাকায় বর্তমানে পানীয় জলের তীব্র সংকট থাকায় সাধারণ জনগণ নানাভাবে সমস্যায় দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

উপজেলার ছনুয়া, খুদুকখালী, গণ্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদ, পুকুরিয়া, কালীপুর, বৈলছড়ি, কাথরিয়া, সাধনপুর, পুঁইছড়ি, চাম্বল, শেখেরখীল ও শীলকূপ ইউনিয়নের অধিকাংশ স্কুলে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। সাগর উপকূলের ইউনিয়নগুলো শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই খাল, বিল ও পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়। প্রচণ্ড গরম পড়লে উপকূলীয় এলাকার ইউনিয়নগুলোতে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। কয়েকটি গ্রাম বা পাড়ায় নলকূপ থাকলেও তার অধিকাংশই অকেজো বা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। উপকূলীয় এলাকায় একটি নলকূপ বসালে অন্তত ৯ শত থেকে ১২ শত ফুট গভীরে যেতে হয়। গভীরে না গেলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় না। গভীরে যেতে হলে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। স্থানীয়রা এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করেন- উপকূলীয় এলাকায় শত শত নলকূপ অকেজো হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে, যার দরুণ পানীয়জলের তীব্র সংকটের মুখে পড়ছে জনজীবন। তাছাড়া সাবমার্সিবল যে নলকূপগুলো রয়েছে তাতেও অনেক সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে পড়তে হয় সুপেয় পানীর সংকটে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শীলকূপ, পশ্চিম গন্ডামারা এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক পরিবার তীব্র পানি সংকটে পড়ে মোটর চালিত যন্ত্র থেকে পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। একইভাবে চাম্বল সোনারখীল এলাকায়ও সন্ধ্যা নামলেই পানীয়জলের জন্য লম্বা সারিতে দাঁড়াতে দেখা যায় গ্রামের বৌ-ঝিদের। অপর দিকে শীলকূপের জালিয়া পাড়া ও শাপলা পাড়ায় যে কয়টি নলকুপ আছে তা অকেজো হয়ে পড়ায় সুপেয় পানি সংকটে ভুগছে তারা। এহেন অবস্থায় এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে ডায়েরিয়া সহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। মিনজির তালা কাহারঘোনা ও চাম্বলের মুন্সিখীল এলাকায়ও মারাত্মক পানি সংকটের কবলে।

খবর নিয়ে জানা যায়, উপকূলীয় এলাকায় শত শত নলকূপ অকেজো হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে যার কোন সংস্কার করা হয়নি। মাত্র কয়েকটি নলকুপেই পানীয় জলের অভাব পুরুণ করছে স্থানীয়রা।বাঁশখালীবাসীর চাহিদা অনুযায়ী কোনো নলকূপ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া নলকূপে শুষ্ক মৌসুমে পানি পায় না জনগণ। বর্তমানে বাঁশখালী পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৬ লক্ষাধিক মানুষ তীব্র পানি সংকটে ভুগছে।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের বাশঁখালীর দায়িত্বরত উপ সহকারি প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন- ‘একদিকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, অন্যদিকে বৈদ্যুতিক মোটর এবং সাবমার্সিবল পাম্প চালিয়ে গভীর নলকূপের মাধ্যমে অনেক নিচ থেকে পানি তুলে নেওয়ার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে জানুয়ারী থেকে মে মাস পযর্ন্ত পানি কম উঠবে, কারণ বর্তমানে পানির স্তর ৪০-৫০ ফুট নিচে নেমে যাওয়ার ফলে আগের বসানো নলকুপ গুলোতে এ মৌসুমে পানি উঠছেনা। তবে বর্ষাকালে পূনরায় পানি উঠবে। সরকারীভাবে বিভিন্ন ইউনিয়নে আমরা গত বছর ৮৫০ ফুট গভীর বেশ কয়েকটি নলকূপ স্থাপন করেছি। নলকুপের চাহিদা বেশি হলেও সরবরাহ কম। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত ৩৬৪ টি সাবমার্সিবল নলকূপের প্রায়ই সবকটি বসানো হয়েছে। এসব নলকূপে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি উঠাতে সমস্যা হয় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে। তবে ২০২৫ সাল পযর্ন্ত সরকারী ভাবে আরো বেশী পরিমান বরাদ্দ আসতে থাকবে।’

বাঁশখালীতে সরকারি-বেসরকারি সহ বিভিন্ন সংস্থা যে নলকূপ স্থাপনে অবদান রাখে তারা যদি যৌথ পরিকল্পনার মাধ্যমে যেসব এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সংকট থাকে সেসব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে নলকূপ স্থাপন করে তাহলে পানীয় জলের সংকট অনেকটা কম হবে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

আরও পড়ুন