কোথায় গৌরবগাঁথা ঐতিহাসিক ঢাকার পল্টন ময়দান!

নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে দেশের পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হলেও ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের বুক চিরে ধীরে ধীরে ইট কংক্রিটের গাঁথুনীতে নানা স্থাপনা তৈরী করে ইতিহাসের পাতা থেকে পল্টন ময়দানকে মুছে দেয়া হলেও কেউ এর প্রতিবাদ করেননি। রাজনৈতিক মহল ও ক্রীড়াঙ্গনের হতে কেউ টু শব্দটিও করেনি। তাই আশির দশকে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গনতান্ত্রিক অধিকার আদায় হতে শুরু করে পূর্ব বাংলার শত শত নেতার বক্তৃতার ঐতিহাসিক মাঠ পল্টন ময়দানকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দেয়া শুরু করে।

এই ময়দানে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হতে শুরু করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রয়েছে জনগণের দাবি আদায়ে বিশাল জনসভার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস বিজড়িত এই পল্টন ময়দান থেকেই ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর ২০০৬ সালে সর্বশেষ এই পল্টন ময়দান থেকে বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে লাখ জনতার সামনে বক্তব্য রাখছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

 

বঙ্গবন্ধু ছাড়া যেমন বাংলাদেশের ইতিহাস অসম্পূর্ণ তেমনি পল্টন ময়দান বাংলাদেশের ইতিহাসকে করেছে গৌরবান্বিত। প্রায় পৌঁনে একশত বছরে পল্টন ময়দানে বিভিন্ন সময়ে দেশের বাঘা-বাঘা নেতাদের বক্তৃতা-ভাষণ শোনতে যেমন লাখো জনতার ঢল নামতো তেমনি নেতাদের ভাষণে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তো আন্দোলনের ঢেউ। বাংলার ইতিহাসের গৌরবময় পল্টন ময়দান ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে স্টেডিয়াম, দোকানপাট আর নানান স্থাপনার নীচে। ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের যেমন রাজনৈতিক ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে, তেমনি আছে ঢাকা স্টেডিয়াম কেন্দ্রীক জনপ্রিয় ফুটবল দলগুলোর ক্লাব টেন্ট, ফুটবল লীগ, ক্রিকেট লীগসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্মুক্ত খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের ইতিহাস।

পঞ্চাশের দশক থেকেই ঢাকা স্টেডিয়ামকে ঘিরে পল্টন ময়দান স্থান করে নেয় ক্রীড়াঙ্গনে। ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান কিভাবে ঝোপজঙ্গল থেকে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিলো? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, সেই বৃটিশ শাসন আমলে আজকের পুরানা পল্টন এলাকায় ঢাকার বুক চিরে ছিলো পান্ডু নদী। আর বৃটিশরা এই এলাকায় তাদের নতুন সেনানিবাস গড়ে তোলতে তৎকালে ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিষ্ট্রট চার্লস ডজের তত্ত্বাবধানে সেনানিবাসের পরিধি বাড়িয়ে ঢাকার ঠাটারিবাজার, নবাবপুর পর্যন্ত সিপাহিদের ছাউনি গড়া হয়। আর ঝোপজঙ্গলে ঘেরা পল্টন এলাকায় সেনা অফিসারদের বাসস্থান, সিপাহিদের প্যারেড গ্রাউন্ড, খেলার মাঠ ও নানান অনুষ্ঠান আয়োজনের স্থান। এরই মধ্যে পান্ডু নদী পলি জমে আস্তে আস্তে ভরাট হতে থাকে। তাই নদী তীরের পুরানা পল্টন ও পল্টন এলাকা মশা, ম্যালেরিয়ায় স্বাস্থ্য ঝুকিপূর্ণ পরিবেশ তৈরী হয়। তাই সিপাহিদের এই ক্যাম্পে শাস্তিমূলক বদলি করা হতো বলে ইতিহাস ঘেটে এমন তথ্যই পাওয়া যায়। তবে এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে সৈনিকদের ক্যাম্প এখানে বেশীদিন টিকে থাকতে পারেনি। সরিয়ে নেয়া হয় মোগলদের নির্মাণ করা লালবাগ কেল্লায়।

ষাটের দশকে পল্টন ময়দানে ঈদ জামাত

গুগল ও পুরনো ইতিহাস ঘেটে আরও জানা যায়, ১৮৪০ সালে ঢাকা ভ্রমণকারী ডেভিডসনের বক্তব্যে ঢাকার পল্টন এলাকাকে বিরান ভূমি, জঙ্গল, ম্যালেরিয়া, ময়লা আবর্জনার এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জায়গা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ওই সময় মিউনিসিপ্যাল কমিটি ও বৃটিশ সেনারা এই এলাকার তদারকি ও উন্নয়ন কাজ করতো। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বর্তমান পুরানা পল্টন ও পল্টন এলাকায় আস্তে আস্তে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। আর এদের বেশীরভাগই ছিলো পাকিস্তানের ধর্নাঢ্য ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা। এরপর পঞ্চাশ দশকে ঢাকার এই জঙ্গল আর বিরান ভূমিতে নির্মাণ করা হয় ঢাকা স্টেডিয়াম। নির্মাণ করা হয় প্রশস্ত রাস্তাঘাট। সেই ঢাকা স্টেডিয়ামই নতুন সংষ্করণে বর্তমান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত। পঞ্চাশ দশক থেকেই এই স্টেডিয়ামের পাশ ঘেষে বিশাল মাঠটি পল্টন ময়দান হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করে। আর এই মাঠের বিস্তৃতি ছিলো পশ্চিমে ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন, পূর্বে মতিঝিল দিলকুশা, দক্ষিণে গর্ভনর হাউজ ( বর্তমান বঙ্গভবন) নবাবপুর ঠাটারীবাজার ও উত্তরে আওয়ামীলীগ অফিস পেরিয়ে বর্তমান জিপিও পর্যন্ত। উন্মুক্ত মাঠগুলো ভিক্টোরিয়া গ্রাউন্ড, ওয়ারী গ্রাউন্ড, মোহামেডান গ্রাউন্ড ও ঢাকা জেলা ডিডিএস গ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত ছিলো। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ ও দাবি আদায়ে এই বিশাল বিরান ভূমির মাঠটি পল্টন ময়দান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে। একই-সময় দেশের জনপ্রিয় ফুটবল ও ক্রীড়া ক্লাবগুলো ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের পাশে তাদের টেন্টগুলো গড়ে তোলে। পল্টন ময়দানে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের পাশাপাশি স্পোর্টস ক্লাবগুলোকে ঘিরে খেলাধূলার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠে।

বাংলাদেশের এমন কোন নেতা নেই, যার স্মৃতি ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান কেন্দ্রীক নয়। বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হলে তৎকালীন ডাকসু নেতাদের উদ্যোগে পল্টন ময়দানের বিশাল সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়ার জন্য পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীকে আল্টিমেটাম দেয়ার পরই পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার জনগনের সকল অধিকার আদায়ে মওলানা ভাসানী হতে বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত বহু নেতা পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্যে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন লাখো জনতার উপস্থিতিতে এই পল্টন ময়দানে দাড়িয়ে। পল্টন ময়দানে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা সমাবেশের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় বেবিট্যাক্সি, রিকসা বা ঘোড়ার গাড়িতে মাইক লাগিয়ে জনসভার প্রচারণা শুরু হতো। প্রচার হতো ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে জনসভায় বক্তৃতা দেয়া নেতাদের নাম।

বর্তমান পল্টন ময়দান

১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংশ্লিষ্ট ঐতিহাসিক জায়গাগুলো ইতিহাস থেকে মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তাই মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে সভা সমাবেশ শুরু হয়। এই মাঠে দাড়িয়ে শেখ হাসিনা শাসকগোষ্ঠীদের উদ্দেশ্যে কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশের জনগনের অধিকার আদায়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলার ডাক দিয়েছিলেন। তাই শাসকগোষ্ঠী স্বাধীনতার ইতিহাস বিজড়িত পল্টন ময়দান আশির দশকের প্রথম থেকেই শুরু করে ইতিহাস থেকে মুছে দেয়ার প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও ক্রীড়াঙ্গনের জনপ্রিয় ক্লাবগুলোর প্রিয় বিশাল মাঠটির ওপর নেমে আসে জুলুম অত্যাচার। যে মাঠে দাড়িয়ে ১৯৬৪ সালের ১২জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান জুলুম প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচিতে সোনার বাংলার প্রিয় ভাইদের বিশাল জনসভায় বলেছিলেন, জনগণের স্বাধীনতার ও ভোটের অধিকারে জন্য এবং রাজবন্দীদের মুক্তির জন্য আবার আন্দোলনে নামতে হলো, সেই দিনের পল্টন ময়দানের উত্তাল জনসমুদ্রের কথা আজও অনেকের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ৭১ এর ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু”র অসহযোগ আন্দোলনের ডাক সারা পূর্ব বাংলার বাঙ্গালী জাতির ঘরে ঘরে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিলো। পাকিস্তানীরা কোনঠাসা ও অসহায় হয়ে পড়েছিলো। যা পরবর্তিতে স্বাধীনতা আন্দোলনে পরিনত হয়। সেই ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের বুক চিরে নির্মাণ করা হয় হকি স্টেডিয়াম। এরই ধারাবাহিকতায় একে একে গড়ে উঠে বিভিন্ন ক্রীড়া অবকাঠামো। এভাবেই ধীরে ধীরে বিশাল খোলামেলা উন্মুক্ত পল্টন ময়দান স্থাপনার নীচে হারিয়ে যেতে শুরু করে। আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে এই পল্টন ময়দান। বিশাল কংক্রিটের জঙ্গলে পরিনত হয়েছে পূর্ব বাংলা ও বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনের নানান ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান। নতুন প্রজন্মের কাছে পল্টন ময়দান আজ কেবলই কাগুজে ইতিহাস। বাস্তবতায় রাজউকের বিপরীত পাশে এক চিলতে পুরনো হকি স্টেডিয়ামের উন্মুক্ত স্থানটুকু ছাড়া হারিয়েছে পুরোপল্টন ময়দান। পঞ্চাশ দশক হতে যারা এই ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে খেলেছেন এবং পূর্ব বাংলা ও বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মওলানা ভাসানী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে জমায়েত হতেন এই মাঠে এবং ভাষণ শোনতে হাজির হতেন এমন বেঁচে থাকা অনেকেরই আজ প্রশ্ন কোথায় আমাদের ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান?

সৈয়দ মাহাবুব সোবানী পাক্কা

রাজনৈতিক ও খেলাধুলার ইতিহাস বিজড়িত নাম পল্টন ময়দান

সৈয়দ মাহাবুব সোবানী পাক্কা। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে ষাট দশক থেকেই পল্টন ময়দান ও ঢাকা স্টেডিয়ামের আড্ডায় নানান ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী। বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সাবেক সদস্য, ঢাকা মেট্রোপলিশ ফুটবল এসোসিয়েশন (ডামফা)র সদস্য, দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগ, টেবিল টেনিস লীগ ও হকি লীগ কমিটির সদস্য এবং রায়ের বাজার এসসির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ক্রীড়াঙ্গনের এই প্রবীণ সংগঠক বলেন, রেসকোর্স ময়দান বা সারোয়ার্দী উদ্যোনে বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণ, ৭১এ পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ ও ৭২ এ বঙ্গবন্ধুর সংবর্ধনার এই তিন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছাড়াও বাঙ্গালী জতির সকল রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসেই ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের নাম জড়িয়ে আছে“।

তিনি বলেন,“বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস লিখতে গেলেই পল্টন ময়দানের নাম আসবে। পল্টন ময়দানে আন্দোলন কর্মসূচির অন্যতম ৬৪সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জুলুম প্রতিরোধ দিবসে বঙ্গবন্ধুর সমাবেশ, ৬৬ এর ৬ দফার কর্মসূচি ঘোষণা, ৬৮এ মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে লাঠ ভবন (গর্ভনর হাউজ) ঘেরাও এর মাধ্যমে ৬ডিসেম্বর ঢাকায় হরতাল ও চারজন নিহতের ধারাবাহিকতায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে পাকিস্তানি শাসকদের বাধ্য করা ও মাত্র আড়াই মাসের ধারাবাহিক আন্দোলনে ৬৯ এ গনঅভ্যুত্থান। এছাড়া ৭১এর ৩মার্চ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকসহ সকল আন্দোলন সংগ্রাম ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে পল্টন ময়দানের নাম“।

প্রবীন ক্রীড়া সংগঠক মাহবুব সোবানী বলেন, “স্বাধীনতা পূর্ব পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও রাজবন্দিদের মুক্তির আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা পল্টন ময়দান থেকেই দেয়া হতো। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, তৎকালীন রাজনৈতিক সকল দলগুলোর বৃহৎ কর্মসূচি ও জনসভাগুলো পল্টনেই হতো। মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হতে শুরু করে রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী, তোয়াহা, মোজাফফর হোসেনসহ বহু রাজনীতিবিদ এই পল্টন ময়দানের সমাবেশ থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বাঙ্গালীদের করণীয় নিয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। রাজনীতির পাশাপাশি পল্টন মাঠে রয়েছে খেলাধূলার ঐতিহ্য। ১৯৪২-৪৩ সালের দিকে এই পল্টন মাঠেই অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের জাতীয় সন্তোষ ট্রফির ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি জানান। দিনে রাজনীতি, বিকেলে খেলা আর সন্ধ্যায় ঢাকা স্টেডিয়ামের ক্যাফ ডি ক্যাফেটেরিয়ায় বসতো নেতাদের জমজমাট আড্ডা। এছাড়া ইসলামিয়া, নিউ ইসলামিয়াও বসতো আড্ডা। আর এই আড্ডা ছিলোই মূলতঃপল্টন ময়দানের সমাবেশ ঘিরেই। স্বাধীনতার পরও আওয়ামী লীগ, সিপিবি, জাসদ হতে শুরু করে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বহু ছোট বড় রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা তাদের দলের বড় বড় শো ডাউন করেছে এই পল্টন ময়দানেই। তাই এই পল্টন ময়দান ইতিহাস-ঐতিহ্য বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমের কাছেও পরিচিত।

সৈয়দ মাহবুব সোবানী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সত্তুর দশকের শেষ সময় হতেই পল্টন ময়দান দানবদের গ্রাসের শিকার হতে থাকে। মাঠের পাশে প্রথমে দর্শক বসার গ্যালারী এরপর আস্তে আস্তে স্টেডিয়াম নির্মান করে দোকান বাণিজ্য। সময়ের ব্যবধানে বিস্তীর্ণ পল্টন ময়দান আজ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। রাজনৈতিক মহল থেকে তো প্রতিবাদ হয়নি, ক্রীড়াঙ্গন থেকেও কোন প্রতিবাদ না হওয়ায় বার বার কেকের মতো টুকরো টুকরো করে স্টেডিয়াম নির্মাণ করে ও বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের অফিস নির্মাণ করে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানকে তার গৌরবময় ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। আজ পল্টন ময়দান ইতিহাসের পাতায় থাকলেও বাস্তবে হারিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, পুরোনো হকি স্টেডিয়ামের যে মাঠটি এখনো আছে, সেটাকেই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। অন্যথায় বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবে পল্টন ময়দান নামক একটি ঐতিহাসিক ময়দানের নাম।

সিরাজউদ্দীন মোঃআলমগীর

পল্টন ময়দানে নতুন স্থাপনা করতে না দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী কে অভিনন্দন

সিরাজউদ্দীন মোহাম্মদ আলমগীর। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম ক্রিকেট প্লেয়ার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকসহ বহু ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ক্রীড়া উৎসাহী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের সর্বশেষ সম্মেলনে খেলার মাঠ সংরক্ষণে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি খেলার মাঠ রক্ষা ও অবৈধ দখলমুক্ত করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পল্টন ময়দান কেন্দ্রীক আন্দোলনের ঐতিহাসিক স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকুতে নতুন কিছু করার অনুমতি দেননি, বরং তার আশপাশের বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর অস্থায়ী স্থাপনা সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। ক্রীড়া উৎসাহী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের শেষ স্মৃতি রক্ষার যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটা প্রশংসনীয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে ১৯৭১ এর ৩ মার্চ এই ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান থেকেই বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।

ক্রীড়া সংগঠক সিরাজউদ্দীন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের সঙ্গে বাঙ্গালী জাতির বহু আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস আছে। তাই এই পল্টন ময়দানকে অতীতে পরিকল্পিতভাবেই হকি স্টেডিয়াম নির্মাণ করে আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের স্হানটি আড়াল করে দেয়া হয়েছে।

তিনি রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধূলায়ও পল্টন ময়দানের ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, সত্তুর দশকেও এই মাঠে দেশের ফুটবল, ক্রিকেট লীগের বিভিন্ন ডিভিশনের খেলা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হতো। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসের সঙ্গে পল্টন ময়দানের নাম জড়িয়ে আছে ওতোপ্রোতভাবে।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও সর্বশেষ পল্টন ময়দানের বিশাল সমাবেশ থেকেই লগি-বৈঠা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। ওই সময় সারাদেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে ঢাকার রাজপথে নেমে এসেছিলো।

তিনি বলেন, ৭১ এর ৩ মার্চ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন আর সাড়ে তিন দশক পর বঙ্গবন্ধু কন্যার ডাকে সমগ্র বাঙ্গালী জাতি আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের জঙ্গিবাদ রুখে দিয়ে দেশকে জামায়াত-বিএনপি”র পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র বানচাল করে দিয়েছিলো, এটাই পল্টন ময়দানের সর্বশেষ আন্দোলনের ইতিহাস। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই খোলা মাঠটি ধরে রাখতে হবে। যে মাঠের সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশ সৃষ্টির আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

আব্দুল গাফফার

বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা ইতিহাসের গৌরবগাঁথা অধ্যায় পল্টন ময়দান

আব্দুল গাফফার ঢাকার ফুটবল অঙ্গনের অতি-জনপ্রিয় মুখ। ফুটবল খেলেছেন ঢাকা মোহামেডান, আবাহনী ক্রীড়া চক্র ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে। ঢাকার পূর্ব রাজা বাজারের সন্তান হলেও ঢাকার শান্তিনগর ক্লাবের হয়ে প্রথম দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে তৎকালীন আউটার স্টেডিয়াম বা পল্টন ময়দানে খেলেছেন সত্তুর দশকের মাঝামাঝি। সময়ের বিবর্তনে আজ সেই পল্টন ময়দানের কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাড়ে চার দশকের ব্যবধানে মাঠের কোন অস্তিত্ব নেই।

পল্টন ময়দান অস্তিত্বহীন হওয়ার বিষয়ে জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার বর্তমান রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল গাফফার বলেন, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ যেমন একই সূতোয়গাঁথা একটি ইতিহাস, তেমনি পল্টন ময়দানের সঙ্গেও বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস জড়িত। বাংলাদেশের সকল আন্দোলন, সংগ্রাম, দাবি আদায়ের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এসেছে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের জনসভা থেকেই। সর্বশেষ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও এই পল্টন ময়দান থেকেই ২০০৬ সালে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। এরপর গোটা জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো আন্দোলনে এবং ইয়াজউদ্দিন নামক কথিত বিএনপি-জায়াতের মনোনীত তত্ত্বাবধায়ত সরকারের পতন ঘটেছিলো।

আব্দুল গাফফার বলেন, এখনো সম্ভব ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের যতটুকু ফাঁকা জায়গা ও অস্থায়ী স্থাপনা রয়েছে তা সরিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের স্মৃতি চিহ্নটুকু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা যায়।

আব্দুল গাফফার বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলো না, যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে মেনে নিতে পারেননি তারাই ধারাবাহিকভাবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সৃষ্টির ঐতিহাসিক স্থানগুলো নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার কাজগুলো করেছেন।

জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কার প্রাপ্ত প্রাক্তন ফুটবলার আব্দুল গাফফার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হলে অবশ্যই ঐতিহাসিক পল্টন মাঠের শেষ স্মৃতিটুকু সংরক্ষণ করা সম্ভব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। অতীতে অনেকেই বুঝে হোক, না বুঝেই হোক সুকৌশলে এই ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানকে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনকে জায়গা বরাদ্দ দিয়ে ইতিহাস মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে।

আব্দুল গাফফার বলেন, এখনো যতটুকু খালি জায়গা আছে বা সরিয়ে নেয়া সম্ভব এমন স্থাপনা এবং ক্রীড়া ফেডারেশন রয়েছে তা স্থানান্তর করে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের স্মৃতি সংরক্ষণ ও এই মাঠের পাশে ঐতিহাসিক জনসভাগুলোর ইতিহাস সংক্ষিপ্ত আকারে পাথরে লিখে রাখার দাবি জানাচ্ছি।

পল্টন ময়দানে স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রসঙ্গে আব্দুল গাফফার বলেন, আশির দশকের প্রথম দিকে পল্টন ময়দানের স্থানে তৎকালীন এরশাদ সরকার একটি স্টেডিয়ামের পাশে আরেকটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানকে তথা বাংলাদেশের ইতিহাসকে মুছে দেয়া শুরু করেছিলেন। পৃথিবীর কোন দেশে একটি স্টেডিয়াম ঘেষে আরেকটি স্টেডিয়াম নির্মাণের নজির নাই। শুধুমাত্র আর্থিক লোভ লালসার কারণে দোকান বানিয়ে কোটি কোটি টাকার ধান্ধার কারনেই দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিসর্জন দিয়ে আরেকটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছিলো। এরপর বড়কর্তা ব্যক্তিরা যখন দেখলো দোকান বিক্রি করেই কোটি কোট টাকা আয় করা যায়, তখন তারা ঢাকা স্টেডিয়ামের খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম ও গ্যালারীতে আসা লাখ লাখ দর্শকের টয়লেটগুলোও দোকানে পরিণত করে ঢাকা স্টেডিয়ামের অবকাঠামো ও পরিবেশ ধ্বংস করে দিলো। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-বিএনপি জোট সরকার পল্টন মাঠের মসজিদটির পাশে ভলিবল স্টেডিয়াম নির্মাণের নামে সেখানেও দোকান বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোট টাকার ধান্ধা করে পল্টন ময়দানের স্মৃতি চিহ্ন মুছে দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় হকি স্টেডিয়ামের খালি জায়গা, ভিক্টোরিয়া, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের খালি জায়গাগুলোতেও বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের জন্য ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণের জায়গা দিয়ে পল্টন ময়দানের শেষ স্মৃতি চিহ্ন মুছে দেয়া হয়েছে। আবার অনেকে শহীদ শেখ রাসেলের নাম ব্যবহার করে রোলার স্কেটিং বানিয়ে দেশের ইতিহাস ধ্বংসের বিষয়টিকে জায়েজ করার চেষ্টা করেছে।

সাবেক ফুটবলার, ক্রীড়া সংগঠক জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কার প্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ আব্দুল গাফফার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দেশে পল্টন ময়দানে ভাষণ দেয়া এতো নেতা থাকতেও বিনা বাধায় দেশের একটি ঐতিহাসিক ময়দানকে ধ্বংস করে দেয়া হলো কেউ প্রতিবাদ করলো না।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার জন্যই ১৯৭৫ এর ১৫আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিলো। যাতে কেউ দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে দেয়ার প্রতিবাদের সাহস না পান। তিনি আবারও বলেন, মওলানা ভাসানী হতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সকলেরই রয়েছে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে সমাবেশের ইতিহাস। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসের গৌরবময় স্মৃতির পল্টন ময়দানের শেষ স্মৃতিটুকু রক্ষার যেন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। এটাই আশা করছি।

পল্টন ময়দানের পাশ থেকে ক্লাব টেন্টগুলো স্থানান্তর প্রসঙ্গে জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার আব্দুল গাফফার খেলাধূলা তথা ফুটবলের মক্কা খ্যাত ঢাকা স্টেডিয়াম পাড়া থেকে মতিঝিল ও ফকিরেরপুল ঝিলপাড়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনেও দেশের খেলাধূলা তথা ফুটবলকে ধ্বংস করারই একটি ষড়যন্ত্র ছিলো বলে মনে করেন। কারণ আমরাবাগের ঝিল পাড় অনেকেটা খেলাধূলার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা স্টেডিয়াম এলাকা থেকে আড়ালে-অন্ধকারে। যেখানে দেশের ফুটবল পাগল সাপোর্টারদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। নেই ক্রীড়া প্রেমিকদের অবাধ বিচরণ। তাই আস্তে আস্তে দেশের এক সময়ের জনপ্রিয় ফুটবল ও ক্রীড়া ক্লাবগুলো বিনোদনবিহীন ক্লাবে পরিনত হয়। এক পর্যায়ে জুয়াড়ীদের দখলে চলে যায় ক্লাবগুলো। ক্লাবগুলোতে সমাজের ক্রীড়া উৎসাহী সুনামধন্য ব্যক্তিরা নিজেদের আড়াল করে ও ক্লাবগুলোতে নিজের বিচরণ বন্ধ করে দেন। আর এই গ্যাপের কারনেই এক শ্রেনীর জুয়াড়ীরা ক্লাবগুলোতে প্রভাব বিস্তার ও দাপট দেখাতে শুরু করেন। সর্বশেষ ক্যাসিনো কেলেংকারী তার প্রমান।

দীর্ঘদিন ক্লাবগুলো তালাবদ্ধ সিলগালা করা প্রসঙ্গে গাফফার বলেন, এটা দুঃখজনক। ঢাকার ফুটবল ও ক্রীড়াঙ্গনের জনপ্রিয় ক্লাবগুলো এভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকতে পারে না। যার ফলে ক্রীড়া সংগঠকদের পদচারণা কমে যাচ্ছে। ক্লাবগুলোর ক্রীড়া কর্মকাণ্ড অচল হয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে যাচ্ছে আমাদের ক্রীড়াঙ্গন। মুখ থুবড়ে পড়ছে দেশের ক্রীড়া উন্নয়ন। তাই অবিলম্বে ফকিরেরপুল ও মতিঝিল ক্লাব পাড়ার সীলগালা করা সবগুলো ক্লাবের তালা খুলে দেয়া উচিৎ বলে একজন প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে তিনি মনে করেন। আব্দুল গাফফার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের রাজনৈতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস মুছে দিতেই অত্যন্ত সুকৌশলে কোনো মহল এই ক্লাব টেন্টগুলো পল্টনের পাশ থেকে সরিয়ে দেশের ফুটবল ও ক্রীড়াঙ্গন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেছিলো বলে মনে করেন।

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান

বিনাবাধায় ইতিহাস বিজরিত পল্টন ময়দান গ্রাস করে ফেলা হচ্ছেঃ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক জীবন্ত ইতিহাস। ঢাকার সন্তান কামরুজ্জামানের শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকার বৃহত্তর তাতীবাজার এলাকায়। ঢাকার মাঠে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলেছেন ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাব ও ষাট দশকের শক্তিশালী ঐতিহ্যবাহী আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। ৮৩ বছরের প্রবীণ এই ক্রীড়াবিদ দেশসেরা ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবেও বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের আইডল হিসেবেই পরিচিত। যুগের পর যুগ ধরে ঢাকার ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। পেয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিকতায় জাতীয় সম্মাননা ও পুরষ্কার।

ঐতিহাসিক পল্টন মাঠের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই পল্টন মাঠে বিচরণ করেছি। খেলেছি ফুটবল ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলা। ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান হারিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এই প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক ও খেলোয়াড়।

তিনি বলেন, আমি শুধু পল্টন মাঠে খেলাধুলাই করিনি সেই পাকিস্তান আমল থেকেই বাংলাদেশের শত শত নেতার বক্তৃতা শোনেছি এই মাঠে দাড়িয়ে। আমাদের বাঙ্গালী জাতির অধিকার আদায়, দাবি-দাওয়াসহ বহু ইতিহাস মিশে আছে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের সঙ্গে।

তিনি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেন, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রবীণ রাজনীতিবিদ মোজাফফর আহমেদ, সাইফুদ্দিন মানিকসহ অগণিত নেতার ভাষণ শোনার জন্য খেলা ফেলে আমরা অপেক্ষা করেছি ঘন্টার পর ঘন্টা।

তিনি বলেন, শুধু বাংলার মানুষের দাবি-দাওয়া আদায় বা অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্যই পল্টন ময়দানের ঐতিহ্য নয়, আছে ক্রীড়াঙ্গনেরও ইতিহাস। বিশাল এই ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে পাকিস্তান আমল থেকেই প্রথম বিভাগ ফুটবল, ক্রিকেট, হকি লীগের আয়োজন এবং এ্যাথলেটসহ দেশসেরা ফুটবল ক্লাবগুলোর ক্রীড়াবিদ ও খেলোয়াড়দের বিচরণ এই পল্টন মাঠেই।

তিনি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো বিনা বাধায় একে একে মাঠটির বুক চিরে গ্রাস করে ফেলছে। দেশের রাজনীতিবিদ বা ক্রীড়াঙ্গন থেকেও কোন প্রতিবাদ করা হয়নি বা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আশির দশকে যখন পল্টন ময়দানের বুক চিরে আরেকটি স্টেডিয়াম নির্মাণ শুরু হলো তখন কেউ এর প্রতিবাদ করলো না। তখন ঢাকার বড় বড় জনপ্রিয় ক্লাবগুলোর সঙ্গে দেশের প্রভাবশালীরা জড়িত ছিলেন। কিন্ত দূর্ভাগ্য আমাদের কেউ প্রতিবাদ করলো না। বাংলাদেশের এতো নেতার স্মৃতি বিজড়িত এই ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান হওয়া সত্বেও একজন নেতাও এর প্রতিবাদ করলেন না।

তিনি বলেন, ক্রীড়াঙ্গন থেকে আমরা লেখালেখির মাধ্যমে প্রতিবাদ করলেও রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব ছিলো প্রতিরোধ গড়ার। কোন প্রতিবাদ না থাকায় আস্তে আস্তে দেশের ঐতিহ্যের পল্টন ময়দান আজ ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যতটুকু জায়গা এখনো বেঁচে আছে তাও যদি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয় তবুও ইতিহাসের এক চিলতে ময়দান হলেও বেঁচে থাকবে। এটা দেখেই আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে, হ্যাঁ এখানে বাঙ্গালী জাতির বহু সংগ্রামের ইতিহাস লুকিয়ে আছে এই মাটি ও কংক্রিটের সঙ্গে।

বৃটিশ শাসন আমলে ঢাকার মাঝ দিয়ে পান্ডু নদীর তীরের জঙ্গল আর বিরান ভূমিতে বৃটিশ সৈনিকদের সেনানিবাস গড়ার মাধ্যমেই এই পল্টন ময়দান গড়ে উঠার কথা উল্লেখ করে প্রবীণ সাংবাদিক ও ক্রীড়াবিদ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই এই ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান রক্ষায় তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিকরা।

তিনি বলেন, পল্টন ময়দানের সঙ্গে আমাদের বড় বড় নেতাদের রাজনৈতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। অথচ তারাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। যার ফলে আজ বাঙ্গালি জাতির ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান গ্রাস করে ফেলা হচ্ছে। ইতিহাস থেকে মুছে দেয়া হচ্ছে হাজারো রাজনীতিবিদের স্মৃতিময় ঐতিহ্য।

আব্দুল জলিল আনসারী

যুগের চাহিদার কাছে হেরে গেছে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান

আব্দুল জলিল আনসারী। পঞ্চাশ দশকে ঢাকার ফুটবল, ক্রিকেট, সাঁতার, সাইক্লিং ও বক্সার হিসেবে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ঐতিহাসিক পল্টন মাঠ থেকে শুরু করে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ্ হল) পুকুরে ইন্টার স্কুল, কলেজ, জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। বয়সে নব্বই এর কোটায় পা রাখা এই প্রবীণ ক্রীড়াবিদের রয়েছে গৌরবময় খেলাধুলার ইতিহাস। ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে খেলার কথা স্বরণ করিয়ে দিতেই তিনি জানালেন, বয়স হয়েছে, বাড়ি থেকে খুব একটা বের হই না। সোনালী অতীত ক্লাবের ইফতার অনুষ্ঠান যাওয়ার পথে পল্টন মাঠ আর খুঁজে পাই না। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আমাদের নেতাদের বক্তৃতা, লাখ জনতার স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত পল্টন ময়দান আজ ইটপাথর কংক্রিটের দালানের নীচে চাপা পড়ে আছে। তার আর্তনাদ কেউ হয়তো শুনতে পায় না। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর সময়ের চাহিদায় হয়তো আজ হাজার হাজার মানুষ বসে খেলা দেখার ব্যবস্থা করতে গড়ে উঠেছে স্টেডিয়ামসহ নানান ক্রীড়া ফেডারেশন। কিন্তু ইতিহাস বিজড়িত সেই খোলা পল্টন ময়দান আর নাই। এক সঙ্গে তিন-চারটি মাঠে খেলা হতো। ফুটবল লীগ, ক্রিকেট লীগ হতে শুরু করে কোন্ খেলা হতো না এই মাঠে? সব খেলার ঐতিহ্যের পাশাপাশি ছিলো রাজনৈতিক দলগুলোর সভা সমাবেশ।

বাঙ্গালী জাতির বহু সংগ্রাম আন্দোলনে জড়িয়ে আছে পল্টন ময়দানের নাম। আমরা যা দেখেছি, এই প্রজন্মের এরা তা কল্পনাও করতে পারবে না। বিশাল উন্মুক্ত খোলা ময়দান, রাজনৈতিক জনসভায় লাখ জনতার ঢল। খেলার মাঠের চার পাশে হাজার হাজার ফুটবল পাগলের কোলাহল চিত্কার। ছিলো না বাস-গাড়ির উচ্চ শব্দ। আজ যেন কোথায় হারিয়ে গেলো সেই পল্টন ময়দান।

তিনি বলেন, সময়ের চাহিদায় ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে মাড়িয়ে আমরা নতুন নতুন স্থাপন গড়ে তোলাকে গুরুত্ব দেয়ায় আজ ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান কংক্রিটে চাপা পড়েছে। তিনি বলেন, এখন হয়তো আমরা আর ফিরে পাবো না আমাদের স্মৃতিময় পল্টন ময়দান। আপসোস ছাড়া আর কিই বা করার আছে? যুগের চাহিদার কাছে হেরে গেছে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের ইতিহাস।

ইউসুফ বক্স

স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের অংশই ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে স্টেডিয়াম নির্মাণ

ইউসুফ বক্স। পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ফরাশগঞ্জের বাসিন্দা। প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে খেলেছেন ফরাশগঞ্জ স্পোটিং ক্লাব, রহমতগঞ্জ এমএফএস ও ঢাকা জেলার হয়ে জাতীয় ফুটবলে। এছাড়া ইন্টার স্কুল-কলেজ ফুটবলেও খেলেছেন। সেই পঞ্চাশ দশক থেকে সত্তুর দশক পর্যন্ত ঢাকার মাঠে ফুটবল খেলেছেন গোলরক্ষক হিসেবে। ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, পল্টন ময়দান ছিলো বিশাল এলাকা জুড়ে। দিলকুশা থেকে আজকের পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, জিপিও, গুলিস্তান হয়ে ঠাটারিবাজার মোড় হয়ে তৎকালীন গভর্নর হাউজ (বর্তমান বঙ্গভবন) পাশ ঘেঁষে আজকের রাজউকের সামনে পর্যন্ত বিস্তৃত। পঞ্চাশ দশকে পল্টন ময়দানে ফুটবল লীগের খেলা হতো টিনের ঘেরাও মাঠে (রাজউকের বিপরীতে)। এখন যে স্থানটি পরিত্যাক্ত হকি স্টেডিয়ামের খোলা জায়গা হিসেবে উন্মুক্ত আছে। তিনি বলেন, এটাই ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের শেষ স্মৃতিচিহ্ন।

প্রাক্তন ফুটবলার ইউসুফ বক্স মনে করেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্থান শুরু ও স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে দেয়ার কাজটি শুরু করা হয়েছিলো। তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন রাজনীতিবিদরা এটাই একটি স্বাধীন বা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্যে দিয়ে এদেশে অগণতান্ত্রিক সরকারের উত্থান ঘটে। জনগনের ক্ষমতা চলে যায় অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছে। আর বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে গোটা জাতিকে একটি ভীতির মধ্যে রাখা হয়। কোন বিষয়েই কেউ যেন প্রতিবাদ না করে। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীরা বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাস বিজড়িত ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে যাতে কোন সভা সমাবেশ বা বড় জমায়েত হতে না পারে তাই বর্তমান হকি স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করে পল্টন ময়দানের ইতিহাস মাটি চাপা দিতে শুরু করেন। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী মনে করেছিলো এই বিশাল পল্টন ময়দান থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শোষণ, জুলুম, অত্যাচারের বিরুদ্ধে গোটা বাঙ্গালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, তাই তাদের ভয় ছিলো আবারও যদি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পিতার ন্যায় ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান জনসমুদ্র পরিনত করে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলেন, তাই পরিকল্পিতভাবেই পল্টন ময়দানকে তাদের নিজেদের স্বার্থে হত্যা করা হয়েছে। ভয়ে কোন রাজনৈতিক নেতাই এর প্রতিবাদ করেননি।

তিনি বলেন, ওই সময় রাজনৈতিকদের চেয়ে সেনা শাসক অগণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকায় পল্টন ময়দান রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। যা আমাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ব্যর্থতা। পরবর্তিতে এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের আমলারা সুকৌশলে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর নামে স্থান বরাদ্দ দিয়ে বাণিজ্যিক চিন্তা ভাবনা থেকেই পল্টন ময়দান খেয়ে ফেলতে শুরু করে। এখন পল্টনের শেষ স্মৃতিচিহ্ন একটি ছোট মাঠ আছে। এই মাঠ থেকেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সর্বশেষ বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। পল্টন ময়দানের এটাই হয়তো আওয়ামীলীগের শেষ জনসমাবেশ।

প্রাক্তন ফুটবলার ইউসুফ বক্স ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকু সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে বলেন, এই স্মৃতিটুকু সংরক্ষণ করা না গেলে আমাদের স্বাধীনতা, বাঙ্গালীর দাবি-দাওয়া আদায়ে ঐতিহ্য ও ইতিহাস বিজড়িত পল্টন ময়দা হারিয়ে যাবে। আমরা পরের প্রজন্মকে গৌরবময় ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করবো।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পূর্ব হতে আজ-অব্দি এমন কোন রাজনৈতিক দল নাই যে, তারা ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে সমাবেশ করে নাই। যে সরকারগুলো এই মাঠ ধ্বংস করেছে ওরাও এই মাঠেই রাজনৈতিক সমাবেশ করেছে।

আরও পড়ুন