আবিষ্কারের বিস্ময় বালক বাঁশখালীর আশির, প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা

শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী প্রতিনিধি :: বিখ্যাত বাঙালী বিজ্ঞানী প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসু বলেছেন ‘যারা বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা করতে পারেনা, হয় তারা বিজ্ঞান বুঝেনা নতুবা তারা বাংলা ভাষা জানে না।’ সেদিন ছোট্ট দুই সহোদর উইলভার রাইট ও অরভিল রাইট দুই ভাই তাদের বাবার দেওয়া উপহার খেলনাকে রাবার ব্যান্ডের সাহায্যে টেনে আকাশ পথে ছেড়ে দিলে পাখা ঘুরতে ঘুরতে খানিকটা উচুঁতে উড়ে আবার ফিরে আসতো। সে খেলনাটি শিশু দু’টির মনে যে আগ্রহ আর কৌতুহল জন্ম দিয়েছিল, পরে তা মানব সভ্যতার ইতিহাসে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। বিমান নিয়ে তাদের আকাশে উড়ার গবেষণা আজ সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায় অনন্য বিপ্লব ঘটিয়েছে। মূলে ছিল ছোট্ট দুটি শিশুর স্বপ্ন।
বলছি বাঁশখালীর ২১ বছরের এক তরুণের কথা। স্বপ্নবাজ তরুণ ক্ষুদে বিজ্ঞানী মুহাম্মদ আশির উদ্দিন আকাশ। বাংলায় স্বপ্ন দেখা, বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা করা এ যেন আশিরের এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সে বিজ্ঞানের ছাত্র নয়। মনের খেলাঘরে লুকিয়ে থাকা স্বপ্ন আর কৌতুহলি মনের জোরে বানিয়ে ফেলেছেন বিমান, যুদ্ধ বিমান, ড্রোন, হেলিকপ্টার ও স্পিডবোট। আকাশ যানগুলো যেমন উড়তে পারে ঠিক নৌযানও পানিতে ভেসে চলে। ছোট ছোট স্বপ্ন তাকে ঠিকই একদিন সফলতার গন্তব্যে পৌছে দিবে এমনটাই ধারণা আশিরের। সে চট্টগ্রাম ডিপ্লোমা ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করে।
আশির সিটিজি সংবাদকে বলেন, ‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি রোবটিকস নিয়ে রিচার্জ করি। সে সাথে অনলাইন জব করি। প্রত্যেক মানুষের একেকটা ইচ্ছা, উদ্দেশ্য নিয়ে স্বপ্ন  থাকে। আমি ছোট বেলা থেকেই ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতাম এবং এগুলো সম্পর্কে বেশ আগ্রহ ছিল। আমার বানানো অনেক ডিভাইস এবং মানুষের কাজকে সহজ করার মতো কিছু রোবটিকস যন্ত্র তৈরি করেছি যেমন ধান কাটার মেশিন, ময়লা আবর্জনা দূর করার মেশিন, সোলার সিস্টেম পানির পাম্প, ইলেকট্রনিক্স বোট, গাড়ি, আকাশ উড্ডডয়নকারি ড্রোন বিমান যেটার মাধ্যমে দূরদূরান্ত থেকে ছবি তোলা, ভিডিও এবং ডেলিভারি কাজের জন্য ব্যবহার করা যায়। আমি ২০১৬ সাল থেকে ড্রোন নিয়ে রিচার্জ করছি। এটা নিয়ে প্রতি পদে পদে ভুল, ধৈর্য্য ও ত্যাগ স্বীকার করে আজ আমি এ বিষয়ে কিছুটা সফল হতে পেরেছি। আমার তৈরি করা বিমানের ওজন তিন কেজি। চার কিলোমিটার বেগে এটি টানা ৩৫ মিনিট আকাশে উড়তে পারে। আমার এই ড্রোন প্রযুক্তি উপর বেশি আগ্ৰহ হওয়ার কারণ- আমি ভবিষ্যতে মানুষ বহনকারী বিমান তৈরি করবো। এটা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে এটা অসম্ভবের কিছু নয়। তবে এ কাজে কোন সাপোর্ট না পেলেও আমার ইচ্ছা, স্বপ্ন ও আগ্ৰহের গতি থেমে থাকবে না।’
আশির জানিয়েছেন, তার এখন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টির প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃষ্টি পেলে আমি দেশেই তৈরী করতে পারবো বিমান, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও স্পিডবোট। এই স্বপ্ন পুরণের লক্ষ্যে আমি আমার সখের মধ্যে দিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রশাসন যদি আমার এই কাজে সাপোর্ট দেয় তাহলে আমি অল্প দিনেই সফলতা আনতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
বাঁশখালী উপকূলীয় পূঁইছড়ি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝের পাড়ার ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিনের বড় ছেলে মুহাম্মদ আশির উদ্দিন আকাশ। আশির সবার বড়। ২০১৫ সালে পূঁইছড়ি ইজ্জতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি ও ২০১৭ সালে মাস্টার নজির আহমদ ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। বর্তমানে তার বয়স ২১ বছর। ২০১৮ সালে থেকে শুধুমাত্র নিজের মনের জোরে প্রথম তৈরী করেন ক্ষুদে বিমান। এরপর থেমে নেই আশিরের গবেষণা। একের পর এক তেরী করে চলেছেন যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও হাই স্পিডের স্পিডবোট। আশির এখন সোস্যাল মিডিয়ার ফেইসবুক, ইউটিউব, ইন্টারনেটে বেশ ভাইরাল হয়েছে। পরিচিতি পেয়েছে ক্ষুদে বিজ্ঞানীর।

আরও পড়ুন