মিডিয়া সন্ত্রাস ও প্রোপাগান্ডা: বিএনপির করণীয়
নাজমুল হুদা সাকিব :: বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনলাইন মাধ্যমগুলো যেমন তথ্য প্রচারের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার, তেমনই প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বিএনপির বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর যে ঢেউ ওঠেছে, তা দলের ভাবমূর্তি ও জনসমর্থনের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। বিএনপির মিডিয়া সেল এই প্রোপাগান্ডা প্রতিহত করতে দৃশ্যমান কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
মিডিয়া সন্ত্রাসের বাস্তবতা: মিডিয়া সন্ত্রাস বলতে বুঝি তথ্য বিকৃতি, অপপ্রচার এবং উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যাচার। ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অনুগত অনলাইন টিম বিএনপিকে বিভিন্নভাবে কালিমালিপ্ত করতে এ ধরনের অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। বিএনপির মিডিয়া সেলের কার্যক্রম এখনো পুরনো পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ। যেখানে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আধুনিক প্রযুক্তি, গ্লোবাল মিডিয়া ট্রেন্ড ও বিশ্লেষণধর্মী কন্টেন্ট তৈরির প্রয়োজন, সেখানে বিএনপির প্রচারণা একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে আছে।
করণীয়: বিএনপির মিডিয়া সেলকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে:
ডিজিটাল টিম গঠন: অনলাইন প্রোপাগান্ডা মোকাবিলায় দক্ষ তরুণদের নিয়ে একটি বিশেষ টিম গঠন করতে হবে। এই টিম হবে প্রযুক্তি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণে পারদর্শী।
ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট চালু করা: প্রোপাগান্ডা মোকাবিলার প্রথম ধাপ হলো সত্য উদ্ঘাটন। একটি ফ্যাক্ট-চেকিং টিম গঠন করে প্রতিটি অপপ্রচারকে সময়মতো মোকাবিলা করতে হবে।
নেতিবাচক প্রচারণার জবাব দেওয়া: প্রতিটি মিথ্যাচারের যথাযথ জবাব দিতে হবে। এই কাজটি তাৎক্ষণিক ও কার্যকরভাবে করতে হবে। জনগণ সত্য তথ্য জানতে চায় এবং সত্যের প্রতি আকর্ষণ সব সময়ই বেশি।
ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া কভারেজ: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উপস্থিতি বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করতে পারলে সরকারের মিডিয়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব।
ইনফ্লুয়েন্সারদের সম্পৃক্ত করা: বিএনপিপন্থী লেখক, ব্লগার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের সক্রিয় করতে হবে। তারা দলের বক্তব্যকে আরও বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
আধুনিক টুলস ব্যবহার: ডিজিটাল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম নিয়ে কাজ করতে হবে। এতে করে বিএনপির প্রচারণা মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
প্রোঅ্যাক্টিভ কন্টেন্ট তৈরির কৌশল: শুধু প্রতিক্রিয়া দেখানোর পরিবর্তে, বিএনপির মিডিয়া সেলকে প্রোঅ্যাক্টিভ হয়ে কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। ইতিবাচক বার্তা ছড়ানোর মাধ্যমে অপপ্রচারকারীদের শক্তি খর্ব করা সম্ভব।
পরিশেষ: বিএনপির বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রোপাগান্ডা ও মিডিয়া সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য একটি সুসংগঠিত, আধুনিক ও কৌশলগত মিডিয়া সেল গঠন অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করবে না, বরং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকেও একধাপ এগিয়ে নেবে। সময় এসেছে বিএনপিকে অনলাইন যুদ্ধের ময়দানে শক্তিশালী হয়ে উঠার।
লেখক: নাজমুল হুদা সাকিব, তরুণ লেখক ও সমাজ বিশ্লেষক।