লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের সরু সড়কে বেআইনী দোকান নির্মাণের অভিযোগ

চট্টগ্রাম নগরীর জাকির হোসেন রোডে অবস্থিত লায়ন্স দাতব্য চক্ষু হাসপাতালের গেট সংলগ্ন আবাসিক ভবনে দোকান নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। ভবনটির নিচতলায় দোকান নির্মাণের জন্য লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনালের নির্মিত সীমানা প্রাচীর এবং সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নির্মিত স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের পাশাপাশি এখানে আছে লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, লায়ন্স প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল (ঠোঁট কাটা, তালু কাটা), আনোয়ারা তাহের লায়ন্স ফিজিওথেরাপি ক্লিনিক, জিরো ক্লাবফুট (মুগুর পা), লায়ন্স ব্লাড ব্যাংক, কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার এবং আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫-বি৪ বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়।

হাসপাতালের সরু গেটের পাশে আবাসিক ভবনে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, অন্ধদের নিয়ে কাজ করা নগরীর শীর্ষস্থানীয় চক্ষু হাসপাতালের প্রবেশমুখে অবৈধ দোকান অন্ধ লোকজনের চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। সামাজিক কর্মকান্ডেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। তাদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনুমোদন না নিয়ে আবাসিক ভবনটিতে অবৈধভাবে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। দোকান নির্মাণ বন্ধ করার জন্য তারা সিডিএ ও পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আর সিডিএ বলছে, আবাসিক ভবনে দোকান নির্মাণের সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে কোনো ভবন মালিককে অনুমোদনও দেয়া হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যস্ততম জাকির হোসেন রোড থেকে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালসহ অন্যান্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবেশমুখটি সরু। প্রতিদিন এই সরু রাস্তা দিয়ে শত শত রোগীসহ বিভিন্ন মানুষ লায়ন্স কমপ্লেক্সে যাতায়াত করেন। নিয়মিত যাতায়াত করেন লায়ন্স কমপ্লেক্সের আবাসিক ভবনগুলোতে বসবাসরত চিকিৎসকসহ অন্য পরিবারগুলোর সদস্যরা। লায়ন্সের নেতৃবৃন্দও এই রাস্তা ব্যবহার করেন। দৈনিক ৫-৬শ রোগীর সাথে তাদের আত্মীয়-স্বজনের চলাচলের কারণে হাসপাতালের এই সড়কটি ব্যস্ত একটি সড়কে রূপ নিয়েছে। এখানে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রিকশা, টেক্সিসহ বিভিন্ন গাড়ির জট লেগে থাকে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিয়মিত রাস্তাটি ব্যবহার করে। কিন্তু হঠাৎ করে এই রাস্তার পাশের একটি আবাসিক ভবনে দোকান নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করেছেন ভবন মালিক। দোকান নির্মিত হলে ভবিষ্যতে রাস্তাটি সাধারণ রোগীদের চলাচলের অনুপযোগী হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সিডিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, আবাসিক ভবনে দোকান নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। এই ব্যাপারে কোনো ভবন মালিককে অনুমোদন দেয়া হয়নি। ওই এলাকায় যে ক’টি ভবন রয়েছে তার কোনোটিই বাণিজ্যিক ভবন নয়।

সিডিএর অথরাইজড অফিসার জানিয়েছেন, সবগুলো আবাসিক ভবন হিসেবে অনুমোদন নেয়া হয়েছে। আবাসিক ভবনে অননুমোদিতভাবে দোকান নির্মাণের ব্যাপারে সিডিএ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই ধরনের অননুমোদিত নির্মাণ সিডিএ গুঁড়িয়ে দিতে পারে।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন, লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালসহ এখানকার সবগুলো প্রতিষ্ঠান দাতব্য। এখানে মুনাফাভিত্তিক কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। সাধারণ মানুষ এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। এরূপ কল্যাণমুখী একটি প্রতিষ্ঠানের সরু রাস্তার পাশে দোকান নির্মাণ করা হলে এলাকার সার্বিক চিত্র পাল্টে যাবে, যা হাসপাতালের রোগীদের সুষ্ঠু ও নিরাপদ সেবা প্রদানে এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সামাজিক কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। দোকান নির্মাণ বন্ধ করার জন্য সিডিএ ও পুলিশের হস্তক্ষে কামনা করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন