চট্টগ্রামে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী নির্যাতন, পাল্টাপাল্টি মামলা

চট্টগ্রামে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে অসহায় স্বামী আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে নিজের অপকর্ম ঢাকতে এবং স্বামী ও তার পরিবারকে ফাঁসাতে স্ত্রীও আদালতে নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাটি চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার মধুর বাড়ির মৃত সালামত আলীর সন্তান মোঃ ইসলাম মিয়া ও তার স্ত্রী নিগার সুলতানার মধ্যে সংঘটিত হয়েছে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখ পারিবারিকভাবে সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন শুরু হয় ইসলাম মিয়া ও নিগার সুলতানার। বিয়ের পর থেকেই শশুর বাড়ির খুটিনাটি বিষয় নিয়ে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে প্রায় সময়ই বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হতো গৃহবধূ নিগার সুলতানা। পরবর্তিতে পারিবারিক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে স্বামী ও শশুড় বাড়ীর লোকজনদের ওপর নির্বিচারে হাত তোলা ও নির্যাতন পর্যন্ত গড়ায়। ফলে বাধ্য হয়ে স্বামী আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী স্বামী ইসলাম মিয়া কর্তৃক গত ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্ত্রী নিগার সুলতানাসহ মোট ৪ জনের বিরুদ্ধে সিআর মামলা নং: ১৭০০/২০২৩ দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন  নিগার সুলতানা,  নিগার সুলতানার ভাই নুরুল হুদা মিঠু,  নিগার সুলতানার ভগ্নিপতি সাজ্জাদ হোসেন বিজয়  এবং নিগার সুলতানার বোন সাবরিনা সুলতানা তানিয়া। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে স্থানীয় থানায় তদন্তের আদেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ অক্টোবর রাতে আসামী নিগার সুলতানা অন্যদেরকে ডেকে এনে  স্বামীর পৈত্রিক সম্পত্তির একটি ফ্ল্যাট রেজিষ্টার্ড কবলা মূলে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ প্রদানসহ ভয়ভীতি, হুমকি ও গালিগালাজ করতে থাকে। তিনি রাজি না হলে নিগার সুলতানা উত্তেজিত হয়ে স্বামীকে চড়- থাপ্পর কিল, ঘুষি মারতে থাকে। অপরাপর সহযোগীরাও এসময় তাকে মারধর করে বলে মামলার এজাহারে দাবি করা হয়। এসময় আলমারী হইতে ২২ ক্যারেটের ১২ ভরি স্বর্ণালংকার, যাহার অনুমানিক মূল্য ১২,০০,০০০/- টাকা, (বিল্ডিং নির্মাণের জন্য ব্যাংক হইতে লোনকৃত) নগদ ৫,০০,০০০/- টাকা, বাদীর হেফাজতে থাকা ১টি হোয়াই নোভা আই-৩, রেডমি-১০-এ ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট, যাহার আনুমানিক মূল্য-৪০,০০০/-টাকা সহ প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি অন্যদের হাতে তুলে দেয়।  নিগার সুলতানার পরিবারের লোকজন চলে যাওয়ার সময় ফ্ল্যাটে রক্ষিত সিসি ক্যামরার ডিভিআর রেকর্ড সিস্টেম চুরি করে নিয়ে যায় বলেও দাবি করা হয়।

অপরদিকে নিগার সুলতানা ২০২২ সালের ৭ জুলাই তার স্বামী ইসলাম মিয়া, তার ভাই খুরশিদ আলম, মোসলেম মিয়া ও তাদের বোন নাছরিন আক্তার বুবলিকে অভিযুক্ত নগরীর ডবলমুরিং থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে ২০ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে বলে উল্লেখ করেন। বাবার বাড়ী থেকে যৌতুক এনে দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে তাকে নির্যাতন করার কথা তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন।

নিগার সুলতানার অভিযোগের পর তদন্তকারী অফিসার ডবলমুরিং থানার এসআই(নিরস্ত্র) মানিক ঘোষ দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদন নিগার সুলতানার অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। ফলে তার অভিযোগটি খারিজ হয়ে যায়।

প্রথম অভিযোগের সত্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে এবং স্বামির দায়ের করা মামলার কাউন্টার হিসেবে নিগার সুলতানা আবারও ১৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ডবলমুরিং থানায় স্বামী এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগেও তিনি যৌতুকের দাবিতে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে দাবি করেন।

নিগার সুলতানার শশুড়বাড়ীর লোকজন তার উশৃঙ্খল আচরণ, গালাগালি, স্বামী সন্তানকে মারধর, ভাসুর, ভাসুরের ছেলেকে মারধরসহ নানা অভিযোগ উত্থাপন করেছে। পরিবারের সকলেই তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে দাবি তাদের। নিগার সুলতানা তার বাবার বাড়ী প্রতিপত্তি এবং ভাইয়ের প্রভাব দেখিয়ে এসব করে যাচ্ছেন বলে প্রতিবেশিদেরও দাবি। নিগার সুলতানার উশৃঙ্খল আচরণ, স্বামীকে থাপ্পড় মারার ভিডিও ফুটেজও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ঘটনার সত্যতা জানার জন্য নিগার সুলতানা ও তার পরিবারের বক্তব্য নিতে কয়েকজন সংবাদকর্মী তার পৈতৃক বাড়িতে গেলে  নিগার সুলতানার ভাই নুরুল হুদা মিঠু ও তার দলবলের রোষানলে পড়ে সংবাদকর্মীরা। একপর্যায়ে তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে। পরে ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করে দেয় তারা। যদিও অনুমতি সাপেক্ষে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছিলো।

ঘটনার সত্যতার বিষয়ে জানার জন্য নিগার সুলতানার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে স্বামী ইসলাম মিয়া বলেন, যৌতুক দাবির তো প্রশ্নই আসেনা। সে আমার পরিবারের লোকজনকে সহ্যই করতে পারেনা। সারাক্ষণ মোবাইলে ব্যস্ত থাকে। কিছু বললে নারী নির্যাতন মামলার ভয় দেখায়। আমাকে, আমার বড় ভাইকে, আমার ভাইয়ের ছেলেকে কয়েকদফায় মেরেছে। তাই বাধ্য হয়েই আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

আরও পড়ুন