পরপারে ভালো থেকো প্রিয় দাদাজান ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইসহাক মিয়া‘
বছরের যে কয়টি দিন আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে ২৪শে জুলাই অন্যতম। দিনটি বিশেষভাবে আমার মনে থাকে, কারণ এইদিন আমার পরম শ্রদ্ধেয় দাদা মরহুম ইসহাক মিয়ার মৃত্যু দিবস। ছোটবেলায় পড়েছিলাম কীর্তিমানের মৃত্যু নেই বা মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়। গুণীজনদের এই মূল্যবান উক্তিগুলো যেনো মিলেই গেলো।
১৯৩২ সাল ১মে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর আগ্রাবাদের হাজীপাড়ায় জন্ম গ্রহন করেন মরহুম ইসহাক মিয়া। তিনি ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। সেই থেকে শুরু হয় দাদা মরহুম ইসহাক মিয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। ১৯৫৬, ১৯৬২, ১৯৬৬ যথাক্রমে আগ্রাবাদের কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তিনি শুধু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হননি জননেতা মরহুম এম এ আজিজ ও জহুর আহম্মদ চৌধুরী নেতৃত্বে ছয়দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন।
১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন চট্টগ্রাম-৮ আসন হতে প্রাদেশীক পরিষদের সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত এমপি হিসেবে ১৯৭২ সালে গণপরিষদ সদস্য মনোনীত হন। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে তৎকালীন চট্টগ্রাম-৮ (ডবলমুরিং, বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টি নেতা সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ব্যারিষ্টার সুলতান আহম্মদকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন চট্টগ্রাম-৮ (ডবলমুরিং, বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়ে বিএনপি নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে হাড্ডাহাড্ডি ভোটের লড়াইয়ে পরাজিত হন। পরবর্তীতে ২০১৩ সাল থেকে মৃত্যু অবধি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্ঠামন্ডলীর সদস্য মনোনীত হন।
একটি গাছ যেমন ছায়া দিয়ে যায়, ঠিক তেমনি আমার দাদা ছিলেন আমার এবং আমার পরিবারের জন্য একটি গাছের ন্যায়, মৃত্যু অবদি আমাদের পাশে থেকে ছায়া দিয়ে গিয়েছেন। দাদা সম্পর্কে বলতে গেলে দাদার সাথে রয়েছে আমার অনেক স্মৃতি। পরিবারের বড় নাতি হিসেবে আমার সর্বদায় সুযোগ হয়েছিল দাদার পাশে থাকার। সেই সকাল হতে দাদার ব্যস্ত সময় শুরু হত এবং চলত রাত অবধি। আমাদের বাড়িটি সর্বদায় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে ভরা থাকত। দাদা মরহুম ইসহাক মিয়া নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যেতেন। দাদার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো আমার সবসময় মনে পড়ে। অবসরে দাদা তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কথা আমাদের বলতেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দাদা ছিলেন এমপি, এতে যুদ্ধে তাঁর দায়িত্বও ছিল বেশী। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার জন্য দাদা মরহুম ইসহাক মিয়া ছিলেন বাঁশখালীর টইটং পাহাড় নামক স্থানে। দাদার সংঙ্গী হিসেবে ছিলেন জাতীয় পার্টি নেতা চকরিয়ার সাবেক এমপি সালাউদ্দিন মাহমুদ। দাদার পুরো জীবনটাই ছিল রাজনীতিকে ঘিরে। জীবনে কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। তাই কখনো লোভ লালসা দাদাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সাধারণ জীবন-যাপনে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শকে বুকে লালন করে পুরো জীবন কাটিয়েছেন।
নেতা-কর্মীদের উৎসবমুখরে ভরা আমাদের বাড়িটি আজ শূন্যে পরিণত হলো। ২৪শে জুলাই ২০১৭ইং দাদা মরহুম ইসহাক মিয়া আমাদের সবাইকে একা রেখে চির বিদায় নেয়। আল্লাহ তায়ালা মহান এই নেতাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুক। আমিন।
লেখক : মোঃ সাফায়েত মারুফ (আবীর), প্রয়াত সাবেক এমপি ইসহাক মিয়ার নাতি।