চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজিতে বেসামাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন

অরক্ষিত নগর ভবন। কোথাও নেই পুলিশ বা সেনাবাহিনী। কাজকর্মে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কেউ ক্যামারার সামনে বা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। প্রায়ই ঘটছে টেন্ডারকে কেন্দ্র করে গ্রুপে গ্রুপে মারামারি বা চেংদোলা করে প্রতিপক্ষকে ওঠিয়ে নেয়ার ঘটনা। এমনই একটি দৃশ্য ধরা পরেছে সিটিজির ক্যামারায়। এ ছাড়া তাপসের সময়ে চাকরি হারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপর চাপ দিচ্ছেন অবরুদ্ধ করছেন চাকরি ফিরে পেতে। নগর ভবনও যেন সব দাবি দাওয়ার বায়না ঘরে পরিনত হয়েছে।

আপাততঃ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কোন বড় ধরনের টেন্ডার না থাকলেও সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপসের সময় নেয়া ওয়ার্ড ভিত্তিক বাড়ি বাড়ি হতে ময়লা সংগ্রহ, খোলা জায়গায় সাপ্তাহিক বাজার ইজারা, নগরীর বাসটার্মিনাল, সড়ক পথ, সিটি কর্পোরেশনের টয়লেটসহ রয়েছে হাটে-বাজার ইজারা আর শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও ঢাকার মেয়রের পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই নগর ভবনে কোন না কোন টেন্ডার নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের টেন্ডার দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তাপসের আমলে নগর ভবনে প্রায় সকল টেন্ডারই আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাদের নামেই টেন্ডার ও ইজারাগুলো ছিলো। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাদের নামে থাকা টেন্ডার গুলোর কাজ দখলে নিতে নগর ভবনে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন গ্রুপের চলছে মহড়া, প্রতিপক্ষকে নগর ভবন থেকে চেংদোলা করে তুলে নেয়া, সাপ্তাহিক মেলা বা বাজার গুলোতে চাদা আদায়কে কেন্দ্র করে মিছিল, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ, সাপ্তাহিক মেলার দোকান মালিকদের কোন পক্ষকে চাঁদা না দেয়ার অনুরোধসহ নানান কর্মকাণ্ড। আর এ সমস্ত কর্মকাণ্ডে বিএনপি ও সহযোগী-অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকায় রাজনৈতিক মহলে এনিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা চলছে।

নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই এই বিতর্কিত কাজগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে দলাদলি-গ্রুপিং সংঘাতের কারনে বিএনপির জনপ্রিয়তা ও ভোটের রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে ঢাকাবাসী মনে করছেন। বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের এমন কর্মকাণ্ড প্রশাসন থেকেও কঠোরভাবে দমন না করার পেছনে বিএনপির জনপ্রিয়তা ধ্বস নামানোর জন্যই এমন সুযোগ দেয়া হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এরই মধ্যে দলের হাইকমান্ড থেকে চাঁদাবাজি, দখলদারীসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি ও দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনা থাকলেও এই বেপরোয়া নেতাকর্মীদের কেউ ঠেকাতে পারছে না।

মঙ্গলবারও দিনভর ঢাকার লালবাগ থানা এলাকার নবাবগঞ্জ বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন সাপ্তাহিক মঙ্গলীবাজারখ্যাত মেলার আয়োজন আওয়ামী লীগের ইজারাদারের সঙ্গে আঁতাত করে কোন চাঁদাবাজি চলবে না। ২৩,২৪,২৫ ও ২৬ চারটি ওয়ার্ডের বিএনপি, সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতারা মিছিল করে নতুন করে টেন্ডার বা ইজারা না হওয়া পর্যন্ত কোন প্রকার চাঁদা না দেয়ার জন্য হকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়ে মিছিল করেছেন। নগর ভবনে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ২৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম শ্যামল।

এদিকে ঢাকার ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের ইজারা শুধু টার্মিনালেই টোল আদায় সীমাবদ্ধ নেই। এই বাসগুলোর অধিকাংশ স্টপেজ এই নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন মালামাল হতে টোল আদায়ের তাপসের আমলে রাজাশাসিত সিস্টেমই বহাল থাকায় শুধুমাত্র ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল ইজারা আনলেও ইজারাদরকে সুযোগ দেয়া হয়েছে ঢাকা শহরের অর্ধেক বাস স্টপেজ ও লেগুনা, সিএনজিসহ সকল গাড়ি থেকেই টোল আদায়ের। এতে করে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও নিত্যপণ্যের বস্তা প্রতি টোল চার্জ আদায়ের কারণে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বৈরশাসক বিদায় হলেও নতুন সরকারের আমলে এমন রাজসিক সিদ্ধান্তে টোল আদায়ে পরিবর্তন না হওয়ায় ঢাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। কারণ, এক বস্তা পেয়াজ, আলু বা কোন নিত্যপণ্য কিনে কত বার বস্তার টোল দিবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নগরবাসী? ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের ইজারা নিয়ে প্রায় গোটা ঢাকা শহরেরর গাড়ি স্ট্যান্ডগুলো থেকে ইজারাদারকে টোল আদায়ের সুযোগ করে দিয়ে নগরবাসী জীবন যাত্রা দূর্বিষহ করে তুলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। যার প্রভাবে দ্রব্য মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে।এ যেন ঢাকা বাসীর পকেট লুট করারই সিস্টেম চালু করা হয়েছে।নগরবাসীর এ জুলুম থেকে মুক্তি চায়।